ভাবছি, এবারও বুঝি আগের মতোই হঠাৎ একদিন এসে উপস্থিত হবেন ; সকালে বসে আছি বারান্দায়, একটা লোক ধীরে ধীরে এসে বাগানে ঢুকল, দেখি মতিবাবু। চাকরদের বললুম, ‘ওরে, দেখ, দেখ, মতিবাবু আসছেন, তামাক-টামাক ঠিক রাখ, চাকররা ছুটে নেমে গেল নীচে, দেখলে কোথাও কেউ নেই। বললুম, “আমি নিজের চোখে স্পষ্ট দেখলুম দিনের বেল, তিনি বাগান দিয়ে হেঁটে দেউড়িতে আসছেন। নিশ্চয়ই তিনি হবেন, খুঁজে দেখ, যাবেন কোথায় আর । কিন্তু তাকে আর পাওয়া গেল না খুজে ; দু চারদিন বাদে তার ছেলে এসে জানালে, মতিবাবুর গঙ্গালাভ হয়েছে। ভাবি, তারও কি এমনি টান ছিল তবে ওই বারান্দার উপর । দক্ষিণের বারান্দার মায়, কী বুড়ো কী ছেলে, কেউ ছাড়তে পারে নি । ঈশ্বরবাবু আসতেন, ছেলেবেলায় দ্বারকানাথের আমলের জাহাজের মতো প্রকাও একটা কোঁচে বসে র্তার কাছে সন্ধেবেলায় গল্প শুনেছি সেকালের কর্তাদের । ঠিক সেই জায়গায় তার সেই চৌকি থাকবে, একটু নাড়ালে উসখুল করতেন । আমরা কোনো-কোনোদিন দুষ্টুমি করে সে জায়গা দখল করলে বলতেন, ‘ভাই, আমার জায়গাতে কেন ? অন্য কোনো চৌকি তার পছন্দ নয়। নিজের চৌকিতে 'আঃ' ব’লে বসে পড়তেন, সে যে কত আরামের 'আঃ' । আসতে যেতে বাগানের লম্বা ঘাসেপ পুছে আসতেন, সেই ছিল তার পাপোশ । সেই ঈশ্বরবাৰু অমুখে পড়লেন । আশি বছরে চোখ কাটালেন, চোখ ভালো হল, খবরের কাগজ পড়লেন। একদিন বললেন, 'জান ভাই ; আমার একটা কষের দাত উঠছে। কুষ্টি পেরিয়ে গেছে, ভারি ফুতি। নবীনবাবুর বাড়িতে পড়ে আছেন। মাঝে মাঝে যাই, তাকে দেখে আসি । তিনি বলেন, ‘ভালে। আছি, ভাই, এই কালই গিয়ে বসব তোমাদের বারান্দায় । শেষ দিনও বলেছিলেন, “কালই যাব সেখানে ? আর ঈশ্বরবাবুর আসতে হল না । পূর্ণবাবুর মতো ঈশ্বরবাবুকে নিয়ে গেল, দেখলুম দক্ষিণের বারান্দায় দাড়িয়ে। তার বাশের লাঠিটি আমায় দিয়ে গিয়েছিলেন । পুরানো লাঠি ; তার মাথায় একটি কুড়ি বসানো, নিজেই শখ করে লাগিয়ে নিয়েছিলেন। ছেলেবেলায় কুড়িটি টেনে খুলতে যে তুম ; তিনি বলতেন, খুলে না ভাই, খুলে না। লাঠির ভিতরে একটি ময়ুর আছে, ছিপি খুললেই বেরিয়ে যাবে।’ মুর্শিদাবাদের গেটে বঁাশের দরোয়ানি লাঠি, নাটকে দারোয়ান সাজতে হত তাকে, তখন ওই লাঠি ఇNSS
পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/২৫৬
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।