গুরুগুরু শুনতে থাকলেম। মৃদঙ্গ বাজছে, সত্যি যেন আকাশে দুন্দুভি বাজছে। রবিক লিখে গেছেন বাদল মেঘে মাদল বাজে । ঠিক তাই, এ বাদ্যযন্ত্র বাজছে, না মেঘ। সেদিন বুঝলুম, তার ঠাকুরদা যে বলেছিল, গণেশের সঙ্গে পাল্প দেবে, তা কেন বলেছিল। রবিকাও আসতেন কোনো-কোনোদিন, বসে মৃদঙ্গ শুনতেন সন্ধেবেলা । শুনে খুব খুশি । বলতেন, ‘অবন, একে হাতছাড়া কোরে না তুমি ।’ তাকে সমাজে কাজ দেবার কথা হয়েছিল। কিন্তু সমাজের কর্তার বললেন, আর একজন বাজিয়ে আছে এখানে, তাকে সরিয়ে কী করে একে নিষ্ট, ইত্যাদি। এই করতে করতে কিছুদিন বাদে দ্বারভাঙ্গার রাজার নজরে পড়ল। বেশি মাইনে দিয়ে আমার কাছ থেকে তাকে লোপাট করে নিয়ে গেল । রবিক কোথায় গিয়েছিলেন, ফিরে এসে বললেন, “অবন, তোমার সেই বাজিয়ে ? বললুম, “চলে গেল, রবিকা। গুণীর গুণ কি চাপ থাকে ? আগুনকে তে চেপে রাখা যায় না। সেই এক শুনেছিলুম মৃদঙ্গ বাজনা । অনেক খোল ওয়ালাকে থামাতে হয় গানের সময়ে । এত জোরে তাল বাজার যে, সে শব্দে গান চাপা পড়ে যায়, ইচ্ছে হয় ছুটে গিয়ে তার হাত চেপে ধরি। • এই দেখে বাজনার কথায় আর-একটা মজার কথা মনে পড়ে গেল । এক বীনকার, নামধাম বলব না, চিনে ফেলবে, বড়ে ওস্তাদ, খুব নামডাক হয়েছে। লঙ্কের নবাব তখন মুচিখোলায় বন্দী হয়ে আছেন,এবারে যাবে তাকে বাজনা শোনাতে। নিজে খুব সেজেছেন, চোগাচাপকান পরেছেন, জরির গোল টুপি মাঞ্চয়,নিজের নামের সঙ্গে জুড়ে দিয়েছেন মস্ত একটা হিন্দুস্থানী উপাধি, অমুকজি ৰীনকার, বীণাটাকেও জড়িয়েছেন নানা রঙের মখমলের গেলাপে। ইচ্ছে, নবাবকে বীণা শুনিয়ে মুগ্ধ করে বেশ কিছু আদায় করবেন। একদিন সকালে বীণা নিয়ে উপস্থিত মুচিখোলায় । খবর গেল, ‘কলকাতাসে এক বড় বীনকার আয় হুজুরকে দরবারমে। খবর পাঠিয়ে বসে আছেন দেওয়ানখানায় । নবাব উঠবেন, হাতমুখ ধোবেন, সে কি কম ব্যাপার ? নবাব উঠে হাতমুখ ধুয়ে, তৈরি হয়ে পান চিবোতে চিবোতে সটকা মুখে মজলিসে এসে বসে হুকুম করলেন ‘তের বীনকারকো বোলাও । নবাবের এত্তালা পেয়ে বঁীনকার উপরে উঠে নবাবকে সেলাম ঠুকে সামনে কায়দা করে বসে বীণার গেলাপ খুলতে লাগলেন এক-এক করে। এখন, নবাবদের কাছে যারা বাজাতে যায় তার আগে থেকে বীণার তার বেঁধে যায়, গিয়েই বাজনা আরম্ভ করে দেয়। বঁীনকার ওখানে ૨8છr
পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/২৬৫
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।