বসেই অনেকক্ষণ ধরে তার বেঁধে স্বর ঠিক করে বীণাটি হাতে নিয়ে যেই না ছু বার প্রিং প্রিং করেছেন, নবাব বলে উঠলেন, “ব্যস করে । নবাবী মেজাজ, তাদের ব্যস’ বলা কী বোঝ তো ? বীনকার তক্ষুনি বীণা গুটিয়ে সরতে নবাব বললেন, ‘দেওয়ান, ইস্কো শ'ও রূপেয়া ইনাম দেও। আউর বোলো দোসর দফে মুচিখোলেমে আনেসে উসকে বীন ছিন জায়েগা। নবাব ছেড়ে দাও, আমি নিজেও যে নবাবি করেছি এককালে, নাচ গান বাজনা বাদ রাখি নি কিছু বলেছি তে সে-সব তোমায়। কিন্তু ও দিকটা হল নী স্বামার। তা, কী করব ? ভিতরে স্বর নেই, যন্তর বাজিয়ে করব কী ? কিন্তু কার হাতে কেমন স্বরের পাখি ধরা দেয় কে বলতে পারে। একটি ছোকরা আসত তখন আমার কাছে। সারেঙ্গি বাজাত। প্রফুল্প ঠাকুরের ছেলের বিয়ে ; মহা ধুমধাম, বিরাট ব্যাপার , গিয়েছি সেখানে । শুনেছি কে এক বাজিয়ে সুরবাহার বাজাবে। খুব বলাবলি হচ্ছে । ভাবছি কে এমন ওস্তাদ বীনকার । সভায় বসেছি, এবারে বাজনা শুরু হবে । দেখি, সেই ছোকরাটি একটি বীণা হাতে এল বাজাতে। চিনতেই পারা যায় না তাকে আর। বললুম, তুমিই বীণা বাজাবে ? সে বললে, ‘হঁ। হুজুর, একটু একটু শিখেছি।’ বললুম, বেশ, বেশ, বাজাও শুনি । মনে পড়ে এতটুকু ছোকরা সারেঙ্গি বাজাত, হঠাৎ দেখি সে এক মস্ত ওস্তাদ, সভায় বাজনা শোনায় ! হয়, যে এক কালে কিছুই জানত না, সে একদিন বীণাও বাজাতে পারে। কতই দেখলেম । আরো শোনে। একবার বাংলা থিয়েটারে গেছি, বুড়ে অমৃত বোস, বড়ো ভালো লোক ছিলেন, পাশে বসে আছেন। আর মিনার্ভ থিয়েটারে ভালো সিন আঁকত, স্টেজ ডেকোরেশন করত, নামটা তার মনে পড়ছে না, আমিই তাকে রেকমেও করে দিয়েছিলুম ; সুেও আছে একপাশে বসে। কী একটা অভিনয় হল । অমৃত বোসকে বললুম, “দেখুন মশায়, আপনাদের অ্যাক্টর অ্যাক্ট্রেস্রা সিংহাসনে বসবে, বসতেই জানে না, গড়গড়ার নলে টান দিতে পারে না। একটা স্ট ডিয়ে করুন, যেখানে তারা এই-সব শিখবে। উঠতে বসতে যারা জানে না, তারা ‘প্লে' করবে কী আবার ? তিনি বললেন, ‘তা বলেছেন ভালো ; এটা করতে হবে এবারে। অন্য আর-এক রাত্তিরে স্টার থিয়েটারে কী এক সিনে আর-এক আর্টিস্ট রাজসভার সিন একে পিছনে ঝুলিয়ে দিয়েছে ; ૨8છે
পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/২৬৬
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।