রেখেছিলেন কোঁটোটি, তাকে বললুম, বের করে দাও ওটি, এতদিন পরে তার মালিক এসেছে। কোঁটোটি এনে দিলুম বুড়ির হাতে। বললুম, সে পঞ্চাশ টাকা চেয়েছিল, তখন অত দাম দিতে চাই নি। তাঁ, তুমি এখন অভাবে পড়েছ, যা চাইবে দেব। নয় তোমার জিনিস তুমি ফিরিয়ে নাও। তাতেও আমি অসন্তুষ্ট নই।’ বুড়ি বললে, ‘হ্য, এ জিনিসটি দেখেছি তার কাছে।’ বলে দু হাতে তা নিয়ে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে যত দেখছে আর দু চোখের ধারা বয়ে যাচ্ছে । বেচারার হয়তো স্বামীর কথা মনে পড়ছিল, কী স্মৃতি ছিল তাতে সেই জানে। খানিক দেখে কোঁটোট আমার হাতে ফিরিয়ে দিয়ে বললে, তিনি তোমায় দিয়ে গেছেন, এটি তোমার কাছেই থাকুক। দাম আমি কিছুই চাই নে ? বললুম, “সে কী কথা ! তোমার স্বামী মারা গেছে, তোমার টাকার দরকার, আর তুমি দাম নেবে না, বল কী ? সে হবে না।’ বুড়ি ছলছল চোখে বললে, ‘বাবু, ও কথা বোলে না। আমি জানি আমার স্বামী অনেককেই নানা জিনিস বিক্রি করত, অনেকের কাছে টাকা পড়ে থাকত। আমি কলকাতায় এসে কদিন যাদের যাদের ঠিকান পেয়েছি তাদের কাছে ঘুরেছি, দাম দেওয় দূরে থাকুক, কেউ স্বীকার পর্যন্ত করলে না যে তারা আমার স্বামীকে চিনত। এক তুমি বললে যে, আমার স্বামীর জিনিস তোমার কাছে আছে। তোমার কাছ থেকে আমি এক পয়সাও চাই নে, এই কোঁটো তোমার কাছেই থাকুক । আর এই চাদরটি তোমার,স্ত্রীকে দিয়ে আমার নাম করে ’ ব’লে থলে থেকে একটা মোট স্থজনির মতে চাদর, পাহাড়ি মেয়ের গায়ে দেয়, তা বের করে হাতে দিলে । জীবনের কর্মের আরম্ভে বড়ে পুরস্কার পেলুম আমরা দুজনে এক গরিব পাহাড়ি বুড়ির কাছে—একটি গায়ের চাদর, একটি সোনার নীসদান । আর একবার হঠাৎ একটা লোক এসে উপস্থিত আমার কাছে— জাপানি টাইপ, কালে চেহারা, চুল উস্কোখুস্কো, ময়ল কোট পাজাম পর, অদ্ভুত ধরনের। আর্টস্কুলের আপিসে বসে আছি ; চাপরাসি এসে বললে, ‘হুজুর, এক জাপানি কুছ লে আয়৷ ” “বললুম, আনে৷ তাকে এখানে ? সে এল ভিতরে ;' বললুম ‘আমার কাছে এসেছ ? তা কী দরকার তোমার ? সে এ দিক ও দিক তাকিয়ে কোটের বুক-পকেট থেকে কালে রঙের চামড়ার একটা ব্যাগ বের করলে, ক’রে তা থেকে দুটি বড়ে বড়ে মুক্তে হাতে নিয়ে আমার সামনে ૨૭૩
পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/২৭৮
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।