পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পড়তে চলেছি, পা-দুটো আমার হারু শহরের দরজায় গিয়ে ঠেকে ঠেকে, ঠিক সেই সময় খড়খড়ির আসরের দিক থেকে ঘোড়দৌড়ের শব্দ আর সহিসদের হৈ-হৈ রব উঠল। অমনি নিজের রিজার্ভ বক্সে হাজির। দেখি গোল চক্কর ঘিরে ঘোড়দৌড় বেধে গেছে! সহিস, কোচম্যান, দরোয়ান যে যেখানে ছিল সবাই মিলে ঘোড়া পালানো আর ঘোড় ধরার অভিনয় করতে লেগে গেছে। এই অশ্বমেধের ঘোড়া ধরা দিয়ে সকালের উত্তর-কাণ্ডের পালা প্রায়ই বেলা দশটাতে কিছুক্ষণের জন্যে বন্ধ হত । স্নান আহারের জন্যে একটা মস্ত ইণ্টারভাল। যাত্রা নিশ্চয়ই চলত তখনো— কেননা এই উত্তর আঙিনাট ছিল সাধারণ দিক ; বাড়ির কাজ-কর্মে লোকের যাতায়াতের অস্ত ছিল না, কামাই ছিল না সেখানে। প্রবেশ আর প্রস্থান— এই ছিল ওদিকের নিত্যকার ঘটনা । দুপুরবেল নিঝুমের পালা চলেছে এখানটায় দেখি। উত্তরের আঙিনার পশ্চিম কোণে আধখান। তেঁতুল আর আধখানা বাদাম গাছের ছাওয়াতে খোলার ঘরটা— ঘরের চাল ধমুকের মতো বেঁকে প্রায় মাটি ছুয়েচে । ঘরের সামনে আধখান। মাটিতে পোত একটা মেটে জালা, তাই থেকে ছীরে মেথর জল তুলে তুলে গা ধুচ্ছে আর ক্রমান্বয়ে ইংরিজিতে নিজের বউকে গাল পাড়ছে, আর বউটী বাংলাতে বকে চলেছে তার সঙ্গে । আস্তাবলের সামনে খাটিয়া, তার উপরে পাতা কালো কম্বল, তাতেই শুয়ে ঝকঝকে ঘোড়ার সাজ আর শিকলি । ঘরের মধ্যে ছোট্ট টাট্র ঘোড়ার শেষের পা-দুটো আর চামরের মতো ল্যাজটা দেখা যায়। ল্যাজটা ছপ, ছপ, করে মশা তাড়ায়, আর পা-দুটে তালে তালে ওঠে পড়ে, কাঠের মেঝেতে খটল খট, শব্দ করে। গোল চক্করের পশ্চিমে আর-একটা পাচিল-ঘেরা চৌকোন জায়গা, কখনো কপি কখনো বেগুন এই দুই রঙের পাতায় ভরাই থাকত সেটা । চক্করের পুব ধারে আর-একটা ঘের জমি, সেটার ফটকের দুই ধারের দেওয়ালে চুনবালিতে পরিষ্কার করে তোলা দুটো হাতি নিশেন পিঠে পাহারা দিচ্ছে । টিনের একটা খালি ক্যানেস্তার কাদায় উলটে পড়ে আছে ; সেইখানটায় হিজিবিজি চাকার দাগ রাস্তায় পড়েছে, তাতে একটু জল বেধে আছে ; পাতিহাস ক'ট। হেলতে দুলতে এসে সেই কাদাজলে নাইতে লেগে যায়। থেকে থেকে মাখ। SS