মরচে-পড়া টিনের কোঁটোয় পুরে। বললুম, দাম কত চাস ? সে বললে, ‘বাবার সঙ্গে যা কথা হয়েছে তাই দেবেন।’ টাকা নিয়ে সেদিন সে চলে তো গেল । ছেলে-মানুষ, পান্নার মূল্য বোঝে নি হয়তো। কয়েকদিন বাদে কার সঙ্গে কী কথা হয়েছে, সে এসে হাজির ৷ বললে, ‘একটি ভুল হয়ে গেছে।’ বললুম, আর ভুল i দস্তুরমত পান্নাটি কিনেছি আমি। রসিদ দিয়ে তুমি টাকা নিয়েছ। এখন ভুল ! বললে শুনব কেন ? এই পান্নাটি তোর বাপের কাছে চেয়েছিলুম সেবারে, পেলুম না। হাতছাড়া হয়ে গেল, আশা তো ছেড়েই দিয়েছিলুম আমি । এবারে তোমার কাছ থেকে আমি কিনেছি, আর কি হাতছাড়া করি ? সে চলে গেল। তার পর বোম্বের ঠাকুরদাস জহুরী আসতে তাকে পাল্লাটি বের করে দেখাই । সে তো হাতে নিয়ে অবাক । বললে, “এ জিনিস আপনি পেলেন কোথায়? এ যে অতি দুর্লভ পার, বহুমূল্য জিনিস। এইরকম ফুল-খোদাইকরা পান্না মোঘল আমলেই ব্যবহার হত শুধু। ঠাকুরদাস বললে, ‘এর এক রতির দাম পাচশো টাকা। পান্নাটির ওজন হল বেশ কয়েক রতি । বললে, “আপনি পঞ্চাশ টাকায় কিনেছেন আমি এখনি ছশো টাকা দিতে রাজি আছি এটির জন্য ।” সে পান্নাটি, আর-একটি দুর্লভ মোহর ছিল আমার কাছে, তার এক দিকে জাহাঙ্গীর আর এক দিকে নূরজাহানের ছবি রাখালবাবু দিয়েছিলেন আমায়, এক শো টাকা দিয়ে কিনেছিলুম। এই মোহর আর পারটি দিয়ে একটি ব্রোচ তৈরি করাঘুম আমাদের বিশ্বস্ত জহুরীকে দিয়ে। সেই পান্নাটির চার দিকে ছোটাে ছোটাে মুক্তে, আর মোহরটি ঝুলছে পান্নাটির নীচে। ব্রোচটি অলকের মাকে দিলুম। তিনি প্রায়ই র্কাধের উপরে ব্যবহার করতেন সেটি, বেশ লাগত। সেই একবার খুব পান্নার বাতিক হয়েছিল। ভেবেছিলুম খুঁজতে খুঁজতে কোহিমুর-টোহিত্যুর পেয়ে যাব হয়তে একদিন । পেলুম না। কিন্তু তার চেয়েও বেশি আজকাল আমার এই কাঠকুটো কুটুমকাটাম—কোথায় লাগে এর কাছে কোহিমুর মণি । আমার ফটিকরানী কোনো কোহিনুর দিয়ে তৈরি হবে না। ভাঙা ঝাড়ের কলমটি নমিত এনে দিলে । ওডিকলোনের একটা বাক্স, সামনেটায় কাচ দেওয়া, তাকে শুইয়ে দিলুম সেই কাচের ঘরে ; বললুম, এই নাও আমার ফটিকরানী ३ॐ6
পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/২৮১
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।