একই দিনে তিনটে মরফিয়া ইনজেকশন ! তারা বলেন, ষে দু ডোজ মরফিয়া দেওয়া হয়েছে তাতে যে হাতিরও ঘুমিয়ে পড়বার কথা। যাই হোক, আরএকটাও তারা দিলেন । বললেন, ‘এতেই ষ হবার হবে, আর চলবে না।’ এই বলেই তারা চলে গেলেন সে রক্তিরের মতো। আমি ঘর থেকে সবাইকে বের করে দিলুম। বললুম, “সবাই চলে যাও এ ঘর ছেড়ে, আমি আজ একলা থাকব ।’ রাতও হয়েছিল অনেক, কদিনের উৎকণ্ঠায় ক্লান্তিতে যে যার ঘরে শোবামাত্রই ঘুমিয়ে পড়েছে। সমস্ত বাড়ি নিস্তব্ধ। আমি বিছানায় শুয়ে আছি বড়ে বড়ো করে দু চোখ মেলে—ঘুমই আসছে না তা চোখ বুজব কী ? চেয়ে চেয়ে দেখছি, একটু একটু মরফিয়ার ক্রিয়া চলছে । দেখি কী, আমার চারি দিকের মশারিটা কেমন যেন কঁপিতে কাপতে সরে গেল, দেয়ালও তাই । উনুনের উপর দেখ না হাওয়া গরম হয়ে কেমন কাপতে থাকে ? দুপুরে মাঠের মাঝেও সেইরকম দেখা যায়, মরীচিকা । সেই মরীচিকার মতো দেওয়ালগুলো কাপছে চোখের সামনে । মনে হতে লাগল যেন ইচ্ছে করলেই তার ভিতর দিয়ে গলে যেতে পারি। এই হতে হতে রাত্রি প্রায় ভোর হয়ে এসেছে। চেয়েই আছি, হঠাৎ দেখি একখানি হাত–মার হাতখানি মশারির উপর থেকে নেমে এল । দেখেই চিনেছি, অসাড় হয়ে পড়ে আছি ; মনে হল মা যেন বলছেন, ‘কোথায় ব্যথা ? এইখানে ? ব'লে হাতটি এসে টকৃ করে লাগল ঠিক বুকের সেইথানটিতে। সমস্ত শরীরটা যেন চমকে উঠল ; ভালো করে চার দিকে তাকালুম, কেউ কোথাও নেই। ব্যথা ? নড়ে চড়ে দেখি তাও নেই । অসাড় হয়ে শুয়েছিলুম, নড়বার শক্তিটুকুও ছিল না একটু আগে ; সেই আমি বিছানায় উঠে বসলুম। কী বলব, নিজের মনেই কেমন অবাক লাগল । বিছানা ছেডে ধীরে ধীরে বাইরে এলুম দিব্যি মানুষ, অস্থখের কোনো চিহ্ন নেই। দোরগোড়ায় চাকর শুয়ে ছিল, সে ধড় মড় করে উঠে এগিয়ে এল। বললুম, ‘কাউকে ডাকিস নে ৷ চুপচাপ একটু ঠাণ্ড জল দে দেখিনি আমার হাতে।' সে ঠাণ্ড জল এনে দিলে, আমি তা ভালো করে মুখে মাথায় দিয়ে বেশ ঠাণ্ডা হয়ে চাকরকে বললুম, “ষা, এবারে আমার জন্যে এক পেয়ালা চা, পুরু করে মাখন দিয়ে দুখানি পাউরুটি টোস্ট, তৈরি করে বাইরে বারান্দায় যেখানে বসে আমি ছবি আঁকি সেখানে এনে দে । আর দেখ, তামাকও וירא
পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/২৯৪
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।