> 8 টাইকান ছিল বড়ে মজার মানুষ। ওকাকুরা শেষবার যখন এসেছিলেন যাবার সময় বলে গিয়েছিলেন, “আমি জাপানে গিয়ে আমাদের দু-একটি আর্টিস্ট পাঠিয়ে দেব। তারা এদেশ দেখবে, নিজের ছবি একে যাবে, তোমরা দেখতে পাবে তাদের কাজ ; তাদের উপকার হবে, তোমাদেরও কাজে লাগবে। তিনি ফিরে গিয়ে দুটি আর্টিস্ট পাঠালেন-টাইৱানকে আর হিশিদাকে । ছেলেমানুষ তখন তারা। টাইক্কানের তবু একটু মুখচোখের কাঠ-কোট গড়ন ছিল, একরকম লাগত বেশ ; হিশিদ ছিল একেবারে কচি, ছোটখাট ছেলেটি। তার মুখটি দেখলে কে বলবে ষে এ ছেলে । ঠিক যেন একটি জাপানি মেয়ে, ছেলের বেশে, প্যাণ্ট কোট-পরা ; আপেলের মতে লাল টুকুটুকু করছে ছুটি গাল, কাচের মতো কালো চোখ, মিষ্টি মুখেব ভাবখানি । আমি ঠাট্টা করে তাকে বলতুম, তুমি হলে মিসেস টাইক্কান। শুনে তারা দুজনেই হেসে অস্থির হত । টাইক্কান আর হিশিদা মুরেনের বাড়িতেই থাকত। এ দিক ও দিক ঘুরে ঘুরে খুব ছবি আঁকত । অনবরত স্কেচ করে যেত ; কত সময়ে দেখতুম, গাড়িতে ষাচ্ছি, টাইক্কান রত্নস্তায় এ দিকে ও দিকে তাকাতে তাকাতে বা হাত বের করে তার তেলোতে ডান হাতের আঙুল বুলিয়ে চলেছে । আমি জিজ্ঞেস করতুম, ‘ও কী করছ টাইক্কান ? সে বলত, ফর্মটা মনে রাখছি। একবার হাতের উপর বুলিয়ে নিলুম, লাইন মনে থাকবে বেশ । কখনো বা দেখতুম তাড়াতাড়ি জামার আস্তিন টেনে তাতে পেনসিল কলম দিয়ে স্কেচ করছে। নিজের সাজসজ্জার দিকে তার লক্ষ্যই ছিল না তেমন—মস্ত বড়ে একটা খড়ের হাট মাথায় দিয়ে রোদে রোদে কলকাত্মার শহর বাজার ঘুরে বেড়াত, খেয়ালই করত না, লোকে কী ভাববে তার ওই খ্যাপার মতে সাজ দেখে। কিছু বলতে গেলে হাসত ; বলত, কী আর হয়েছে তাতে। জান, এই টুপি রোদরে বেশ ঠাণ্ড রাখে মাথ।।’ টাইকান আমাদের স্ট-ডিয়োতে আসত, বসে কাজ করত। সেই-সব ছবির আবার একৃজিবিশন হত, লোকে কিনত। আমরাও অনেক সময়ে ফরমাশ দিয়ে ছবি আঁকাতুম। বিদেশে এসেছে, তাদের খরচ চালাতে হবে তো—ওই ছবির টাকা দিয়েই খরচ চলত। ՀԵ->
পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/২৯৮
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।