জালানো চাই। গেবিদ তখন আমাদের গোল চক্করে দরবারে বসেছে ; পুলিশের রহস্তটা বুঝেও যেন সে বোঝে নি এইভাবে পাহারাওলাকে শুধুলে, ‘সরকার থেকে কতটা তেল গরিবদের দেওয়ানোর হুকুম হল ? এক-পল করে তেল বিনামূল্যে দেওয়ানোর কথা যেমন পুলিশম্যান গোবিন্দকে বল, অমনি জবাব সঙ্গে সঙ্গে—‘যা: যাঃ, তোর বড়োসায়েবকে বলিস, গোবিন্দ এক সের তেল নিজে থেকে খরচ করচে । ভিকৃটোর হিউগোর গল্পের একটা ভিখিরির সর্দারের মতো এই গোবিন্দ খোড়ার প্রতাপ আর প্রতিষ্ঠা ছিল তখনকার দিনে। এখন হলে পুলিশের সঙ্গে তকরার, সিডিশন, রাজদ্রোহ, এমনি কিছুতে ধরা পড়ে যেত নিশ্চয় গোবিন্দ এদিকে গোবিন্দ গোড়ার দরবার গোল চক্করের পাটিলে, ওদিকে নহবতখানার ছাতে বসেছে তখন আমাদের সমশের কোচম্যানের মজলিস দড়ির খাটিয়া পেতে। সে যেন দ্বিতীয় টিপু স্থলতান বসে গেছে ফরসি হাতে । হাবসির মতো কালো রঙ, মাথার চুল বাবরিকাটা, পরনে শাদা লুঙ্গি, হাতকাটা মেরজাই, চোখে স্বর্ম’, মেদিতে লাল মোচড়ানে গোফ, সি থেকাটা দাড়ি । বাবামশায় হাওয়া পেতে যাবার পূর্বে ঠিক সময়ে সে সেজেগুজে বার হত। চুড়িদার পাঞ্জাম, রুপোলি বকলস দেওয়া বার্নিশ জুতো, আঙলে রুপো-বাধা ফিরোজার আংটি, গায়ে জরিপাড়ের লাল বনাতের বুক-কাট কাবা তকমা আঁটা, কাধে ফুল-কাট রুমাল, মাথায় থালার মতো মস্ত একট, মলা, কোমরে দুই সহিসে মিলে জড়িয়ে দিয়েছে লম্ব সাপের মতো জরির কোমর-বন্ধ। ফিটফাট হয়ে সমশের লাল চক্করের পাচিলে চাবুক হাতে দাড়াত আর সহিস শাদ জুড়ির ঘোড়। দুটোকে চক্করের মধ্যে ছেড়ে দিয়ে বাইরে থেকে ফটক বন্ধ কবে দিত। তখন শাদা ঘোড়া দুটোকে প্রায় দশ মিনিট সার্কাসের ঘোড়ার মতো চক্কর দিইয়ে তবে গাড়িতে জোতার নিয়ম ছিল। পাছে রাস্তায় ঘোড়া বজাতি করে সেইজন্যে তাদের আগে থাকতে টিট করাই উদ্দেশু। এই দুর্দাস্ত কোচম্যান, ঘোড়াও তার তেমনি, গাড়িখানা থেকে যেন ঝড়ের মতো বেরিয়ে পড়ত। কোচবাক্সের উপরে দেখতেম খাড়া দাড়িয়ে সমশের হাকড়াচ্ছে চাবুক ! ফেটিং-গাড়ি ছিল খুব উচু। গাড়িবারান্দার ধিলেনের কাছটাতে এসেই বপ, করে সমশের নিজের আসনে বসে পড়ত গম্ভীর হয়ে ! তার পর এক সময়ে ঘোড়া গাড়ি কোচম্যান সাজগোজ সব নিয়ে একট। ૨ છે
পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/৩০
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।