পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/৩০১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

টেকনিক। এমন একটা সৌহান্ত ছিল আমাদের মধ্যে—বিদেশী শিল্পী আর দেশী শিল্পীর মধ্যে কোনো তফাত ছিল না। এখন সেইটে বড়ে দেখতে পাই নে । টাইকান দেখতুম রীতিমত নেচার স্টাডি করত—আমাদের দেশের পাত, ফুল, গাছপালা, মানুষের ভঙ্গি, গহনা, কাপড়চোপড়, যেখানে যেটি ভালো লেগেছে খাতার পর খাতা ভরে নিয়ে গেছে। বিশেষ করে ভারতবর্ষের লোকদের মুখচোখের ছাদ, ভারতীয় বৈশিষ্ট্য, দস্তুরমত অমুশীলন করেছে। সেই সময়ে টাইক্কানের ছবি আঁকা দেখে দেখেই একদিন আমার মাথায় এল, জলে কাগজ ভিজিয়ে ছবি অঁাকলে হয়। টাইকানকে দেখতুম ছবিতে খুব করে জলের ওয়াশ দিয়ে ভিজিয়ে নিত। আমি আমার ছবিস্থদ্ধ কাগজ দিলুম জলে ডুবিয়ে । তুলে দেখি বেশ সুন্দর একটা এফেক্টু হয়েছে। সেই থেকে ওয়াশ প্রচলিত হল । খুব কাজ করত টাইক্কান। হিশিদা ততটা করত না, সে বেশ এখানে ওখানে ঘুরে বেড়াত। কোথায় একটু কী মাটির টুকরো পেলে, তাই ঘষে রঙ বের করলে। বাগানে সিম গাছ ছিল, ঘুরতে ঘুরতে দু-চারটে পাতা ছিডে এনে হাতে ঘষে লাগিয়ে দিলে ছবিতে। কুল গাছের ডাল পড়ে আছে কোথায়, তাই এনে একটু পুড়িয়ে কাঠকয়লার কাঠি বানিয়ে ছবি একে ফেললে । বেচারা জাপানে ফিরে গিয়েই মারা গেল। মাস-কয়েক ছিল তারা এদেশে। বলেছিল আবার আসবে, আবার আর-একদল আর্টিস্ট পাঠাবে। তা আর হল না। হিশিদা বেঁচে থাকলে খুব বড়ো আর্টস্ট হত। একটি ছবি একেছিল—দূরে সমুদ্রে আকাশে মিলে গেছে, সামনে বালুর চর, ছবিতে একটি মাত্র ঢেউ এ কেছে যেন এসে আছড়ে পড়ছে পাড়ে । সে যে কী সুন্দর কী বলব। পান্নার মতো ঢেউয়ের রঙটি, তার গর্জন যেন কানে এসে বাজত স্পষ্ট । বড়ো লোভ হয়েছিল সেই ছবিতে। হিশিদ তো মরে গেল, টাইকান ছিল বেঁচে। খুব ভাব হয়ে গিয়েছিল তাদের সঙ্গে, অস্তরঙ্গ বন্ধুর মতো। বরাবর চিঠিপত্র লিখে খোজখবর রাখত। রবিক সেবার জাপানে যাবেন, নন্দলালকে নিয়ে গেলেম সঙ্গে, ওদের দেশে আর্টিস্টদের ভিতরে গিয়ে থেকে দেখেশুনে আসবে। নন্দলালকে বললুম, টাইক্কানের কাছে যাবে, থালি হাতে যেতে নেই। আমার কাছে ছিল একটি খোদাইকর ব্রোঞ্জ, বহু পুরোনে নবাবদের আমলে ঘোড়ার বকূলসের একটা રાજ8