পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/৩১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

একজন বললে, ‘ও, তাই, বয়েসকালে অনেক অত্যাচার করেছে ; এখন এসেছে পরকালের কথা ভেবে গঙ্গায় পুণ্যি করতে। শুনে হেসেছিলুম আপন মনেই। কিন্তু কথাটা মনে ছিল । অবিনাশ ছিল আমাদের মধ্যে ষণ্ডাগুণ্ড ধরনের। আমার সঙ্গে অসিত গানবাজনার আডডা জমাতে। তাকে ঠেলা দিয়ে বললুম, দেখোন! অবিনাশ, ও দিকে যে গীতার পাতা থেকে চোখই তুলছে না বলাই আর কোনো দিকে।’ শুনে অবিনাশ তড়াক করে লাফিয়ে উঠে, বলাই বই পড়ছে ঘাড় গুজে তার ঘাড়ের কাছে দাড়িয়ে হাত বাড়িয়ে বইটি ছে৷ মেরে নিয়ে একেবারে তার পকেটজাত করলে। বলাই চেচিয়ে উঠল, “কর কী, কর কী, মা বলে দিয়েছেন সকাল-বিকেল গীত পড়তে। আর গীতা ! অবিনাশ বললে, ‘বেশি বাড়াবাড়ি কর তো গীতা জলে ফেলে দেব।’ বলাই আর কী করে, সেও শেষে আমাদের গানবাজনায় যোগ দিলে। কেরানিবাবুর। দেখি উৎসব হয়ে থাকেন আমাদের গানবাজনার জন্য। যে কেরানিবাৰু আমাকে ঠেস দিয়ে সেদিন ওই কথা বলেছিলেন তিনি একদিন ষ্টীমারে উঠতে গিয়ে পা ফসকে গেলেন জলে পড়ে, আমরা তাড়াতাড়ি সারেঙকে বলে তাকে টেনে তুলি জল থেকে। পরে আমার সঙ্গে তার খুব ভাব হয়ে যায়। তখন যে-কেউ আসত, আমাদের ওই দলে যোগ না দিয়ে পারত না। একবার এক—যাকে বলে ঘোরতরবুড়ো—নাম বলব না-শরীর সারাতে ষ্টীমারে এসে হাজির হলেন । দেখে তো আমার মুখ শুকিয়ে গেল। অবিনাশকে বললুম, ‘ওহে অবিনাশ, এবারে বুঝি আমাদের গান বন্ধ করে দিতে হয়। টপ্পা খেয়াল তো চলবে না আর ধর্মসংগীত ছাড়া।" সবাই ভাবছি বসে, তাই তো । আমাদের হারমোনিয়ম দেখে তিনি বললেন, ‘তোমাদের গানবাজন হয় বুঝি ? তা চলুক-না, চলুক।” মাথা চুলকে বললুম, সে অন্য ধরনের গান। তিনি বললেন, ‘বেশ তো, তাই চলুক, চলুক-না। ভয়ে ভয়ে গান আরম্ভ হল। দেখি তিনি বেশ খুশি মেজাজেই গান শুনছেন । তার উৎসাহ দেখে অরি আমাদের পায় কে— দেখতে দেখতে টপাটপ টপাটপ টপ্পা জমে উঠল। শুধু গানই নয়, নানারকম হৈ-চৈও করতুম, সমস্ত ষ্টীমারটি সারেঙ থেকে মাঝির অবধি তাতে যোগ দিত। জেলে-নেীকে ডেকে ডেকে মাছ কেন। হত—ইলিশ মাছ, তপসে মাছ! একদিন ভাই রাখালি অনেকগুলি তপসে PRసెt