এই কথাই বলেছিলেন রবিকাকা আমার লেখার বেলায়। একদিন অষিায় উনি বললেন, ‘তুমি লেখে-না, যেমন করে তুমি মুখে গল্প কর তেমনি করেই লেখো । আমি ভাবলুম, বাপ রে, লেখা— সে আমার দ্বারা কস্মিনকালেও হবে না। উনি বললেন, ‘তুমি লেখোই-না ; ভাষায় কিছু দোষ হয় আমিই তো আছি।’ সেই কথাতেই মনে জোর পেলুম। একদিন সাহস করে বসে গেলুম লিখতে। লিখলুম এক ঝোঁকে একদম শকুন্তলা বইখান । লিখে নিয়ে গেলুম রবিকাকার কাছে, পড়লেন আগাগোড় বইখানা, ভালো করেই পড়লেন। শুধু একটি কথা ‘পল্বলের জল’ ওই একটিমাত্র কথা লিখেছিলেম সংস্কৃতে । কথাটা কাটতে গিয়ে না থাকৃ’ বলে রেখে দিলেন। আমি ভাবলুম, যাঃ ! সেই প্রথম জানলুম, আমার বাংলা বই লেখার ক্ষমতা আছে। এত ষে অজ্ঞতার ভিতরে ছিলুম, তা থেকে বাইরে বেরিয়ে এলুম। মনে বড়ো ফুতি হল, নিজের উপর মস্ত বিশ্বাস এল। তার পর পটাপট করে লিখে যেতে লাগলুম— ক্ষীরের পুতুল, রাজকাহিনী, ইত্যাদি । সেই-ষে উনি সেদিন বলেছিলেন ‘ভয় ক", আমিই তে৷ আছি সেই জোরেই আমার গল্প লেখার দিকটা খুলে গেল । কিন্তু আমার ছবির বেলায় তা হয় নি— বিফলতার পর বিফলতা। তাই তে এদের বলি, শেখা জিনিসটা কী ? কিছুই না, কেবলই মনে হবে কিছুই হল না। আবার সেই দুঃখের কথাটাই বলি। শেখা, ও কি সহজ জিনিস ? কী কষ্ট করে যে আমি ছবি আঁকা শিখেছি! তোমাদের মতন নয়, দিব্যি আরামের ঘর, কয়েক ঘণ্টা গিয়ে বসলুম, কিছু করলুম, মাস্টারমশায় এসে ভুলটল শুধরে দিয়ে গেলেন । আর্টিস্ট চিরদিনই শিখছে, আমার এখনো বছরের পর বছর শেখাই চলছে। যদিও ছেলেবেলা থেকেই আমার শিল্পীজীবনের শুরু, কিন্তু কী করে কী ভাবে তা এল আমি নিজেই জানি নে । দাদা সেন্ট জেভিয়ারে রীতিমতো ছবি আঁকা শিখতেন, ছবি একে পুরস্কারও পেয়েছিলেন । সত্যদাদা হরিনারায়ণবাবুর কাছে বাড়িতে তেলরঙের ছবি অঁাকতেন, দাদাকেও হরিবাবু শেখাতেন। মেজদা, নিরুদা আমার পিসতুত ভাই, তারও শখ ছিল ঘড়ি মেরামতের আর হাতির দাতের উপর কাজ করবার। এক তলার ঘরে বসে তিনি হাতির দাতে ছবি অঁাকতেন ; এক দিল্লিওয়াল আসত তাকে শেখাতে। মাঝে মাঝে সেখাম গিয়ে উকিঝুকি দিতুম, ভারি ভালো লাগত। হিন্দুমেলায় যে দিল্লির মিনিয়েচার দেখেছিলুম २→→
পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/৩১৬
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।