আমার কী অবস্থা বোঝাব কী তোমায়। ছবিতে আমার তখন মনপ্রাণ ভরপুর, হাত লাগাতেই এক-একথানা ছবি হয়ে যাচ্ছে । হু হু করে ছবি হতে লাগল। কৃষ্ণচরিত্র, বুদ্ধচরিত্র, বেতালপঞ্চবিংশতি, ইত্যাদি। নীচের তলার দালানটাতে বসে মশগুল হয়ে ছবি আঁকতুম। আমি যখন কৃষ্ণের ছবি আঁকছি তখন শিশির ঘোষ মশায় ছিলেন পরম বৈষ্ণব । একদিন তিনি এলেন কৃষ্ণের ছবি দেখতে। আমি নীচের তলার ঘরটিতে বসে . নিবিষ্টমনে ছবি আঁকছি, মুখ তুলে দেখি দরজার পাশে একটি অচেন মুখ উকিঝুকি মারছে। আমি বললাম, কে হে। তিনি বললেন, ‘আমি শিশির ঘোষ। তুমি কৃষ্ণের ছবি আঁকছ তাই শুনে দেখতে এলুম। আমি তাড়াতাড়ি উঠে আমুন আমুন’ বলে তাকে ঘরে এনে ভালো করে বসিয়ে ছবিগুলি সব • এক এক করে দেখাতে লাগলুম। তিনি সবগুলি দেখলেন, শেষে হেসে বললেন, 'হ, কী একেছ তুমি ? এ কি রাধাকৃষ্ণের ছবি ? লম্বা লম্ব সরু সরু হাত পা যেন কাটখোট্টাই—এই কি গড়ন ? রাধার হাত হবে নিটোল, নধর তার শরীর। জান না তার রূপবর্ণনা ? এই বলে তিনি চলে গেলেন। আমি খানিকক্ষণ হতভম্ব হয়ে রইলুম, কিন্তু তার কথায় মনে কোনো দাগ কাটল না। ছবি করে যেতে লাগলুম। তখন আমি বিলিতি ছবির কাগজ পড়িও না, দেখিও না, ভয় পাছে বিলিতি আর্টের ছোয়াচ লাগে। গান বাজনা আর ছবি নিয়ে মেতে ছিলুম। দিনরাত কেবল এসরাজ বাজাই, ছবি আঁকি। সেই সময়ে কলকাতায় লাগল প্লেগ । চার দিকে মহামারী চলেছে, ঘরে ঘরে লোক মরে শেষ হয়ে যাচ্ছে। রবিকাকা এবং আমরা এ বাড়ির সবাই মিলে চাদ তুলে প্লেগ হাসপাতাল খুলেছি, চুন বিলি করছি। রবিকাকা ও সিস্টার নিবেদিতা পাড়ায় পাড়ায় ইনস্পেকৃশনে যেতেন। নার্স ডাক্তার সব রাখা হয়েছিল। সেই প্লেগ লাগল আমারও মনে। ছবি আঁকার দিকে না ঘোসে আরো গানবাজনায় মন দিলুম। চারি দিকে প্লেগ আর আমি বসে বাজনা বাজাই । হবি তো হ, সেই প্লেগ এসে ঢুকল আমারই ঘরে। আমার ছোট মেয়েটাকে নিয়ে গেল। ফুলের মতন মেয়েটি ছিল বড়ো আদরের। আমার মা বলতেন, ‘এই মেয়েটিই অবনের সব চেয়ে স্বন্দর । ন-দশ বছরের মেয়েটি আমার টুক করে চলে গেল ; বুকটা ভেঙে গেল। কিছুতেই আর মন যায় না। এ বাড়ি ছেড়ে চৌরঙ্গিতে একটা বাড়িতে আমরা পালিয়ে গেলুম। সেখানে ΨΔ ου
পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/৩২৩
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।