আমি তার উপর এই দু-তিনটে ওয়াশ দিয়ে দিলুম ছেড়ে—হাত ধরে দেখিয়ে দেখিয়ে আমি কখনো শেখাই নি। ছবি করে নিয়ে আসত, আমি শুধু কয়েকটি ওয়াশ দিয়ে মোলায়েম করে দিতুম, কিংবা একটু আধটু রঙের টাচ দিয়ে দিতুম, যেমন ফুলের উপর সুর্যের আলো বুলিয়ে দেওয়া—স্বৰ্ষ নয় ঠিক, আমি তো আর রবি নই, নানা রঙের মাটিরই প্রলেপ দিতেম। তখন আমাদের আঁকার কাজ তেজে চলেছে। নন্দলাল সূর্যের স্তব আঁকল তে স্বরেন এ দিকে রামচন্দ্রের সমুদ্রশাসন অঁাকল, এই তীর ধনুক বাকিয়ে রামচন্দ্র উঠে রুখে দাড়িয়েছেন। নন্দলাল একে আনল একটি মেয়ের ছবি, বেশ গড়নপিটন, টান টানা চোখ ভুরু। আমি বললুম, এ তো হল কৈকেয়ী, পিছনে মন্থর বুড়ি এ কে দাও।” হয়ে গেল কৈকেয়ী-মন্থরা। ছবির পর ছবি বের হতে লাগল। চার দিকে তখন খুব সাড়া পড়ে গেল, ওরিয়েণ্টাল আর্ট সোসাইটি খুলে গেল, হৈ-হৈ রৈ-রৈ কাণ্ড । ইণ্ডিয়ান আর্ট শব্দ অভিধান ছেড়ে সেই প্রথম লোকেরু মুখে ফুটল। আমি নিজে যখন ছবি আঁকতুম কাউকে ঘরে ঢুকতে দিতুম না, আপন মনে ছবি অঁাকতুম। মাঝে মাঝে হাভেল সাহেব পা টিপে টিপে ঘরে ঢুকতেন পিছন দিক দিয়ে, দেখে যেতেন কী করছি। চৌকি ছেড়ে উঠতে গেলে ধমক দিতেন। আমার ক্লাসেও সেই নিয়ম করেছিলুম। দরজায় লেখা ছিল, "তাজিম মাফ’ । আমার ছবি আঁকার-পদ্ধতি ছিল এমনি । বললুম, তোমরা একে যাও যদি লড়াইয়ে ফতে না করতে পার তবে এই আমি আছি—ভয় কী ? কেন বলি যে আমার আর্টের বেলায় ক্রমাগত ব্যর্থত ? কী দুঃখ যে আমি পেয়েছি আমার ছবির জীবনে। যা ভেবেছি যা চেয়েছি দিতে, তার কতটুকু আমি আমার ছবিতে দিতে পেরেছি ? যে রঙ যে রূপ-রস মনে থাকত, চোখে ভাসত, যখন দেখতুম তার সিকি ভাগও দিতে পারলুম না তখনকার মনের অবস্থা, মনের বেদন অবর্ণনীয় w চিরকাল এই দুঃখের সঙ্গে যুঝে এসেছি। ছবিতে আনন্দ আর কতটুকু পেয়েছি। শুধু দুবার আমার জীবনে আনন্দময় ভাব এসেছিল, দুবার আমি নিজেকে ভুলে বিভোর হয়ে গিয়েছিলুম, ছবিতে ও আমাতে কোনো তফাত ছিল না— আত্মহারা হয়ে ছবি একেছি। একবার হয়েছিল আমার কৃষ্ণচরিত্রের ছবিগুলি যখন অঁাকি। সারা মন-প্রাণ আমার কৃষ্ণের ছবিতে ভরে গিয়েছিল। চোখ বুজলেই চারি দিকে ছবি দেখি \う>>
পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/৩২৮
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।