পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/৩২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আর কাগজে হাত ছোয়ালেই ফল ফস করে ছবি বেরয় ; কিছু ভাবতে হয় না, যা করছি তাই এক-একখানা ছবি হরে যাচ্ছে। তখন কৃষ্ণের সব বয়সের সব লীলার ছবি দেখতে পেতুম, প্রত্যেকটির খুঁটিনাটি রঙ-সমেত। সেই ভাব আমার আর এল না । আর একবার এসেছিল, কিন্তু ক্ষণিকের জন্য। সেবারে হচ্ছে আমার মার আবির্ভাব, মৃত্যুর পর। মার ছবি একটিও ছিল না। মার ছবি কী করে আঁকা যায় একদিন বসে বসে ভাবছি, এমন সুময়ে যেন আমি পরিষ্কার আমার চোখের সামনে মাকে দেখতে পেলুম। মার মুখের প্রতিটি লাইন কী পরিষ্কার দেখা যাচ্ছিল, আমি তাড়াতাড়ি কাগজ পেনসিল নিয়ে মার মুখের ড্রইং করতে বসে গেলুম। কপাল থেকে যেই নাকের ওপর ভুরুর খাজ টুকতে গেছি— সে কী ! মা কোথায় মিলিয়ে গেলেন ! হঠাৎ যেন চার দিক অন্ধকার হয়ে গেল। মনে হল কে যেন আলোর স্বইচটা বন্ধ করে দিলে—সব অন্ধকার ! আমি চমকে বললুম, ‘দাদা, এ কী হল।’ দাদা একটু দূরে বসে ছিলেন ; মুখ টিপে হাসলেন ; বললেন, ‘বডড তাড়া করতে গিয়েছিলে তুমি । মন খারাপ হয়ে গেল। চুপচাপ বসে রইলুম ; আর মনে হতে লাগল, তাই তো, এ কী হল! মা এসে এমনি করে চলে গেলেন । কিছুক্ষণ ওভাবে ছিলুম, এক সময়ে দেখি আবার মায়ের আবির্ভাব। এবারে আর তাড়াহুড়ে না, স্থির হয়ে বসে রইলুম। মেঘের ভিতর দিয়ে যেমন অস্তদিনের রঙ দেখা যায় তেমনিতরো মায়ের মুখখানি ফুটে উঠতে লাগল। দেখলুম মাকে, খুব ভালো করেমন-প্রাণ ভরে মাকে দেখে নিলুম। আস্তে আস্তে ছবি মিলিয়ে গেল, কাগজে রয়ে গেল মায়ের মূতি । এই যে মার ছবিখানা, সে ওই অমনি করেই আঁকা। এত ভালো মুখের ছবি আমি আর আঁকি নি । আমার মুখের কথায় যদি সংশয় থাকে চাক্ষুষ প্রমাণ দেখলে তো সেদিন । সন্ধের অন্ধকারে রবিকার মুখের ছবি আঁকতে বসলুম, ঝাপসা ঝাপসা অস্পষ্ট লাইন পড়ল কাগজে, তোমরাও দেখতে পাচ্ছিলে না পরিষ্কার চেহারা। আমি কিন্তু দেখলুম স্বল্পষ্ট চেহারা পড়ে গেছে কাগজে, আর ভয় নেই। নির্তয়ে রেখে দিলেম, সে রাতের মতে ছবির কাজ বন্ধ। জানলেম ছবি হয়ে গেছে, নির্ভাবনায় ঘরে গেলুম। সকালে উঠে ছবিতে শুধু দু-চারটে রঙের টান অপেক্ষ রইল । - • . \9>a ●