ছ-এক দিনের মধ্যেই গুছিয়ে বসলুম। মা এক-এক করে সবাইকে পাঠিয়ে দিতে লাগলেন জগন্নাথদর্শনে। বাড়ির ছোটে বড়ো দাসী চাকর কেউ বাণ নেই। আমিও তিন-চার দিন মন্দির ঘুরে দেখে এলুম সবকিছু। কেবল মা-ই বাকি। যাবার তেমন তাড়াই নেই। বলি, “পালকি ঠিক করে দিই, জগন্নাথ দৰ্শন করে আস্থান।’ মা সে কথায় কানই দেন না—দিব্যি নিশ্চিন্ত, ভাবখানা যেন জগন্নাথ দৰ্শন হয়ে গেছে । মাঝে মাঝে পালকি চড়ে সমুদ্রের ধারে খানিক হাওয়া খান, বেশির ভাগ বাড়িতেই বসে বসে ঘর সংসার খাওয়াদাওয়ার তদারক করেন আর সবাইকে ঠেলে ঠেলে মন্দিরে পাঠান । একদিন হঠাৎ মা আমায় বললেন, ‘তুই জগন্নাথকে দেখেছিল ? “জগন্নাথ ? না, তা তো দেখি নি।’ মা বললেন, ‘সে কী কথা ! মন্দিরে গেলি অথচ বেদীর উপরে ঠাকুর দেখলি নে ? তোকে তা হলে জগন্নাথ দেখা দেন নি, পাপ আছে তোর মনে তাই। তা হবে। কতবার মন্দিরে গেছি—ঘুরে ঘুরে নিখুঁতভাবে সব কারুকাজ দেখেছি, কোথায় জগন্নাথের চন্দন বাট হচ্ছে, কোথায় মালা গীথে, কোথায় ফুলের গয়না তৈরি করে মেয়ের বসে, কোথায় সে-সব ফুলের বাগান, কোথায় মাটির তলায় বটকৃষ্ণমৃতি, সব দেখেছি। কিন্তু মা যখন ওই কথা বললেন তখন খেয়াল হল মন্দিরের ভিতরেও গেছি, অন্ধকারের মধ্যে প্রদীপের আলোতে ভিড় দেখেছি লোকজনের, কিন্তু জগন্নাথকে দেখি নি। আসলে আমি জগন্নাথকে দেখতে যাই নি ; যা দেখতে গেছি তাই দেখেছি। যে যা দেখতে চায় তাই তো দেখতে পায়। মার কথা শুনে পরদিন আবার গেলুম জগন্নাথকে দেখতে পাণ্ড সঙ্গে নিয়ে, পাণ্ডাকে পাশে দাড় করিয়ে একেবারে ভিতরে গিয়ে জগন্নাথকে দেখে তার সোনার চরণ স্পর্শ করে এলুম। - তখন মা বললেন, ‘এবারে আমায় দেপিয়ে আনতে পারিস ? “নিশ্চয়ই।’ পালকি ঠিক। পাণ্ডাকে বলে সব ব্যবস্থা করলুম যাতে না ভিড়ে মার কষ্ট হয় বেশি না হাটতে হয়। বকশিশের লোভে সে ভিড় সরিয়ে ফাকা রাখল নাটমন্দির কিছুক্ষণের জন্য। তখন আমিই পাণ্ডা, যা বলছি তাই হচ্ছে। মাকে গরুড়স্তম্ভ, আনন্দবাজার, বৈকুণ্ঠ, যা যা দেখবার সব এক-এক করে দেখিয়ে নিয়ে গেলুম ঠিক জগন্নাথের সামনে। অন্ধকারে ভয় পান এগোতে, পড়ে যানবুঝিব। وع لا تنا
পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/৩৩৩
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।