পাচ বছর উপরি-উপরি পুরীতে গিয়েছিলুম। সমুদ্রের হাওয়া যতদিন বইত মা থাকতেন। উলটে দিকে হাওয়া বইতে থাকলেই মা চলে আসতেন ; বলতেন, আর নয়। একবার জ্যাঠামশায় এলেন পুরীতে, অমুখে ভুগে শরীর সারাতে। বাড়ির কাছেই বাড়ি ঠিক করে দিলুম, সঙ্গে কৃতি ভায়া, হেমলতা বৌঠান ও মুনীশ্বর চাকর। জ্যাঠামশায় এসেছেন, গেলাম দেখা করতে। দেখি মুনীশ্বর দোতলার ছাদে একটা তক্ত তুলছে। কী ব্যাপার! জ্যাঠামশায় বললেন, "এ কিরকম বাড়ি, আমি ভেবেছিলুম ঠিক সমুদ্রের উপরই বাড়ি হবে—বসে বসে কেমন সুন্দর দেখব। কিন্তু এ তো তা নয়, কতখানি অবধি বালি, তার পর সমুদ্র । বললুম, এইরকম তে সকলের বাড়ি পুরীর সমুদ্রের ধারে। একেবার বাড়ির তলা দিয়ে সমূদ্র বয়ে যাবে, তা কী করে হবে এখানে। জ্যাঠামশায়ের মন ভরে না বfরান্দায় বসে সমূদ্র দেখে। দোতলার চিলেঘরের সামনে একটা তক্তার উপরে কোঁচ পেতে তার উপরে বসে সমুদ্র দেখে তবে খুশি । হেসে বলেন, ‘তোমাদের ওখান থেকে কি ওইরকম দেখতে পাও?’ মাথা চুলকে বলি, তা এইরকমই দেখতে বৈকি খানিকট।’ আত্মভোলা মানুষ ছিলেন জ্যাঠামশায়। একদিন বিকেলে বললেন, "চলো সতুর বাড়িতে বেড়িয়ে আসি। সঙ্গে আমি ও কৃতি। খানিকক্ষণ গল্পসল্প করবার পর চুপচাপ বসে আছি সবাই। কীই-বা আর বলবার থাকতে পারে। সন্ধে হয়ে এল । আমরা উসখুস করছি। জ্যাঠামশায় দেখি নির্বিকার হয়ে বসে আছেন, ওঠবীর নামও নেই। ক্রমে রাত হয়ে এল, জ্যাঠামশায়ের খাবার সময় হল । হঠাৎ এক সময়ে 'মুনীশ্বর’ ‘মুনীশ্বর’ বলে ডেকে উঠলেন। কৃতি বললে, 'মুনীশ্বর তো এখানে আসে নি, সে তো বাড়িতে আছে। ‘ও, তাই বুঝি ! এ বাড়ি তবে কার? আমি আরো ভাবছিলুম মুনীশ্বর আমায় খাবার দিচ্ছে না কেন, রাত হয়ে গেল। আচ্ছ ভুল হয়ে গিয়েছিল তো আমার।’ বলে হে হে করে হাসি । মেজোজ্যাঠামশায় এসেছিলেন পুরীতে সেবারে। আমরা তিনটে পরিবার পাশাপাশি । স্বরেনও ছিল : জয়, মঞ্জু ছোটো ছোটো। একদিন যা কাও ! স্বরেন চলেছে সমুদ্রের ধার দিয়ে ভিজে বালির উপরে। সঙ্গে জয়, মধু ; সুরেনের সে খেয়াল নেই। এখন, এক,ঢেউয়ে নিয়েছে ভাসিয়ে জয়াকে । \う>b"
পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/৩৩৫
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।