পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/৩৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গেল গেল ! স্বরেন দেখে ঢেউয়ে চুল দেখা যাচ্ছে, টপ করে চুল ধরে টেনে তুললে মেয়েকে। কী সর্বনাশই হত আর একটু হলে । কত বলব সে দেশের ঘটনা। পর পর কত কিছুই না মনে পড়ে—সে বিস্তর কথা। একবার আমি হারিয়ে গিয়েছিলুম, সেও এক কাণ্ড । পুরীতে অনেক দিন আছি, ভেবেছি সব আমার নথদর্পণে । একদিন হাটতে হাটতে চক্রতীর্থ পেরিয়ে গেছি সমুদ্রের ধার দিয়ে, রাস্ত ছাড়িয়ে বালির উপর ধপাস ধপাস করে চলেইছি। কত দূরে এসে পড়েছি কে জানে। হঠাৎ চটক ভাঙল, দেখি স্থর্যাস্ত হচ্ছে। যে দিকে চাই চতুর্দিকে ধুধু বালি । না নজরে পড়ে জগন্নাথের মন্দির, না রাস্তা, না কিছু। শুধু শব্দ পাচ্ছি সমুদ্রের। কোনদিকে যাব ? ঘোর লেগে গেছে। তার ধরে চলব, তারও তো কোনো জ্ঞান নেই । একেবারে স্তম্ভিত । শেষে সমূদ্রের শব্দ শুনে সেই দিকে চলতে লাগলুম। খানিক বাদে দেখি এক বুড়ি চলেছে লাঠি হাতে ; বললে, ‘কোথায় যাচ্ছ? বললুম, ‘চক্রতীর্থে। ভাবলুম চক্রতীর্থে পৌছতে পারলেই এখন যথেষ্ট । বুড়ী বললে, ‘তা যে দিকে যাচ্ছ সে দিকে সমুদ্র। আমার সঙ্গে এসো, আমি যাচ্ছি চক্রতীর্থে। বুড়ির সঙ্গে চক্রতীর্থে ফিরে হাফ ছেড়ে বাচি। নয়তে। সারা রাত সেদিন ঘুরে বেড়ালেও কিছু খুজে পেতুম না। ‘ভূতপত রীতে আছে এই বর্ণনা। অন্ধকারে সমুদ্রের ধারে বালির উপর হাটতে কেমন ভূতুড়ে মনে হয়—মনসাগাছগুলিও কেমন যেন। সেইবারেই আমি ভূত দেখি। সত্যিই । উড় রফ, ব্লাণ্ট কোনারক দেখে এসে বললেন, “বাও, দেখে এসে আগে সে মন্দির। একদিন রওনা হলুম কোনারকে, চারখানা পালকিতে লাঠি লণ্ঠন লোকজন স্ত্রীপুত্রকন্যা সব সঙ্গে নিয়ে। ‘পথে বিপথে’ বইয়ে আছে এই বর্ণনা । কুড়ি মাইল পথ বালির উপর দিয়ে। • যাচ্ছি তো যাচ্ছি, সারারাত। পান, তামাক, খাবার জলের কুজো পালকির ভিতরে তাকে ঠিক ধরা ; মিষ্টান্নের ভাড়ও একটি ; পাশে লাঠিখানা। পালকি চলেছে ‘হুম্প হুয়া’। পুরী ছাড়িয়ে সারারাত চলেছি—ভয়ও হচ্ছে, কী জানি যদি বালির মাঝে পালকি ছেড়ে পালায় বেহারারা। আমার আগে আগে চলেছে তিনখানা পালকি । মাঝে মাঝে হাক দিচ্ছি, ‘ঠিক আছিস সবাই ? স্কনসান বালি, কোথায় যে আছি—বাতাসে না পৃথিবীতে কিছু বোঝবার উপায় নেই! থেকে থেকে \ご)>○