পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/৩৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মেলা আকাশ, টপ টপ করে ছ-একফোটা বৃষ্টি পড়ছে কয়েকটা বড়ো ফুলের গাছ, তার পাশে নাচছিল কয়েকটি ওড়িয়া মেয়ে । কাজরীর ছবিখানি পরে তা থেকেই হল। - - - Sసె আরো কত যে দেখেছি, কত ছবি এঁকেছি, তার কি হিসেব আছে ? নী আমিই তার হিসেব রেখেছি ? আর, কী ভাবে কী থেকে যে ছবি এঁকেছি তা জানলে হিসেব চাইতে না আমার কাছে । পুরীতে বসে সমুদ্র দেখেছি, নাচ দেখেছি ; সেখানে আঁকি নি। বহুকাল পরে কলকাতায় বসে আঁকলুম সে-সব ছবি। মুসৌরিতে দেখেছি ঘুরেছি। অনেক কাল বাদে বের হল পাখির ছবিগুলি। সেখানে থাকতে ছবি আঁকি নি ; ঘুরে ঘুরে দেখেছি, পাখির গান শুনেছি। পাখির গান সত্যিই আমায় আকর্ষণ করেছিল। শহরের পাখিগুলো গান গায় না, চেঁচায়— খাবার জন্যে চেচায়, বাসার জন্যে চেঁচায়, মারামারি করে চেচায় । বলব কী মুসৌরি পাহাড়ের পাখিদের গানের কথা । উষাকাল, স্থর্যোদয় দেখবার আশায় বসে আছি, কম্বল মুড়ি দিয়ে কান ঢেকে চুরুটটি ধরিয়ে খোলা পাথরের চাতালে ইজিচেয়ারে— সেই সময়ে আরম্ভ হল পাখিদের উষাকালের বৈতালিক। দূরের পাহাড়ে একটি পাখি একটু স্বর ধরলে, সেখান থেকে আরএক পাহাড়ে আর-একটি পাখি সে স্বর ধরে নিলে। এমনি করতে করতে সমস্ত পাহাড়ে প্রভাতবন্দন শুরু হয়ে গেল। তখনো স্থর্যোদয় হয় নি। ধীরে ধীরে সামনে বরফের পাহাড়ের পিছনে স্থর্য উঠছেন। শাদী বরফের চুড়ে দেখাচ্ছে ঘন নীল, যেন নীলমণির পাহাড়। পাখিদের বৈতালিক গান চলেছে তখনো। শেষ নেই— এ পাহাড়ে, ও পাহাড়ে, কত পাহাড়ে। যেমন সুর্য উদয় হলেন বৈতালিক গান থেমে গেল। সারা দিন আর গান শুনতেম না । মানুষ জাগল। রিকশা চলল ঘণ্টা বাজিয়ে। টংটঙিয়ে কাজে চলল সবাই । দূরে মিশনরি স্কুলে ঘণ্টা বাজল, আকাশে ধ্বনি পাঠাতে লাগল টং টং টং টং। কাজের স্বরে ভরে গেল অতবড়ো পাহাড়। এমনি সারা দিনের পর বেলাশেষে ছুটির ঘণ্টা বেজে উঠল স্কুলবাড়িতে, গির্জের ঘড়ি থামল প্রহর বাজিয়ে। وع : وعة