পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/৩৪৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভিতরে যা তৈরি হল, তাই ছবিতে বের হল। মন ছিপ ফেলে, বসে আছে চুপচাপ। আর সবই কি ঠিকঠাক বের হয় ? মুসৌরি পাহাড়ের একটা সন্ধের পাখি আঁকলুম, কী ভাবে সে ছবিটা এল ? সন্ধে হচ্ছে, বসে আছি বারান্দায়—বাংলাদেশে সেদিন বিজয় । হঠাৎ দেখি চেয়ে একটা লাল আলো পর পর পাহাড়গুলির উপর দিয়ে চলে গেল। সেই আলোয় পাহাড়ের উপরে ঘাসপাতা ঝিলমিল করে উঠল। মনে হল যেন ভগবতী আজ ফিরে এলেন কৈলাসে, আঁচল থেকে খসা সোনার কুচি সব দিকে দিকে ছড়াতে ছড়াতে । রঙ, আলোর ঝিলমিল, তার সঙ্গে একটু ভাব—উমা ফিরে আসছেন কৈলাসে। তখনই ধরে রাখল মন । কলকাতায় এসে ছবি অঁাকতে বসলুম। ঠিকঠাক সেইভাবেই কি বের হল ছবি ? তা তো নয়, মনের কোণ থেকে বেরিয়ে এল সোনালি রুপালি রঙ নিয়ে স্বন্দরী একটা সন্ধের পাখি–সে বাসায় ফিরছে। মনের এ কারখানা, বুঝতে পারি নে। এত আলো, এত ভাব, সব তলিয়ে গিয়ে বের হল একটি পাখি, একটি কালো পাহাড়ের খণ্ড, আর তার গায়ে একগোছা সোনালি ঘাস। অনেক ছবিই আমার তাই—মনের তলা থেকে উঠে আসা বস্তু। কবিকঙ্কণে একেছি সবশেষের ছবি—দুই পাহাড়ের মাঝখান দিয়ে ঘট হাতে আসছে একটি মেয়ে। মুসৌরি পাহাড়ে বিজয়ার দিন ওই অমনি ছবির খসড়াই লিখেছিল মন, এও বুঝি তাই। সেই মুসৌরি পাহাড়ের কথা কতকাল বাদে বের হল কবিকঙ্কনে.পটের ছবিতে । ওইরকম কত ছবির তুমি হিসেব ধরবে ? সব উলটাে পালটা। যেমন পুতুল গড়ি আর-কি। আছে মানুষ, ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে তাতে একদিন ঠোট বসিয়ে দিই, হয়ে যায় পাখি। তাই বলি চোখ আর মন এক জিনিস ধরে না সব সময়ে। মনই এখানে প্রবল। ইচ্ছে করলে চড়ুইপাখিকে স্বর্গের পাখি বানিয়ে দিতে পারে । লেখাতেও তাই। চোখ দেখে ভায়োলেট ফুল, বাকিটা আসে কোথেকে ? মন দেয় জোগান, চোখ ধরে পাত্রট, মন ঢেলে দেয় তাতে মধু। তখন সে আর-এক জিনিস হয়ে যায়। তখনই সেই সোনার ময়ুর, সোনার হরিণ। যাক, আর্টের এ-সব তত্ত্বকথায় মাথা ঘামিয়ে কাজ নেই। একে বাও ; মন যোগ দেয় ভালো, নয় তা চোখের দেখাই যথেষ্ট। vEN9 e