হারুয়া ছেলের মন, সে বাসায় ঢুকতে চাচ্ছে, গাছে চড়তে চাচ্ছে, ঠিক করতে পারছে না, চাদের মতে উকিঝুকি মারছে গাছের আড়াল থেকে। ঘরের বুড়ি দাসী কোলে করে গায়— ওই এক চাদ, এই এক চাদ চাদে চাদে মেশামেশি । এবারে খোজাখুজির পালা। কী নিয়ে খেলব ? সঙ্গে আছে কে ? ঘরের মানুষ বুড়ি দাসী। তার থেকেও জীবন রস টানছে। বাইরে থেকেই টানছে, ঘর থেকেও টানছে । যেমন ঘরের দাসী তেমনি পোষা পশুপার্থী এরাও । আস্তে আস্তে এল আশেপাশের সঙ্গে যোগাযোগ। বুনো ছাগল, খেলতে চাই তার সঙ্গে, সে চোখ রাঙিয়ে শিঙবাগিয়ে তেড়ে আসে, অথচ মনকে টানে। ফুলের ডাল দেখে মন চায় চড়ুইপাখি হয়ে তাতে ঝুলতে। হাস উড়ে আসছে, এবারে মন আরো খানিকটা এড়িয়ে গিয়ে জানতে চায়। যেন মেঘদূতের যক্ষের মতো পড়ে আছে একজন , স্থদুরের আকাশ হতে সংবাদ নিয়ে এসে সামনে দিয়ে উড়ে গেল হাস । এইকালে কল্পনা এল। গোল চাদ বেরিয়ে আসছে বনের ভিতর থেকে ! মেঘ তাকে ঢেকে দিচ্ছে বারে বারে। ঘন বনে অদ্ভূত এক পাখি ডাকতে ডাকতে ঘুরে বেড়াচ্ছে। - তার পর কতরকম সংগ্রহ, নানা ঘাটে ভিড়তে ভিড়তে চলেছে। কোথাও ফুল কোথাও ছেলেমেয়ে, কোথাও গাছ, কত কী। ঘাটে ঘাটে ঠেকেছে আর সংগ্রহ করেছে। বড়ো শৌখিন কাল সেটা। সে হচ্ছে রোমান্সের যুগ। স্মৃতি করে, থেলায় মেতে সময় কাটিয়ে, শখের জিনিস সব সংগ্রহ করলে । তার পর সংসার যেমনি চোখ রাঙালে, মহাকালের রক্তচক্ষু বললে, ‘কোথায় চলেছিস আনন্দে বয়ে ? থাকৃ এবারে !” সেই মহাকালের ধমক খেয়ে মন চমকে উঠল। তখন আর খেলা-খেলনাতে মন বসে না । পুরোনো খেলনার বোঝা পিঠে বয়ে আর-এক ঘাটে চলল। ধমক খেয়ে এখন কোথায় যায়, কী করে, কী খেলে, এই ভাবনা ৷ জীবনতরু জল না পেলে বঁাচে না । পাথরের থেকেও রস নিতে চায়, যে পাষাণের মঞ্চে সে বাধা থাকে তা থেকে। - ৩৩২
পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/৩৪৯
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।