হারানিধি খুঁজে না ফিরে চুপচাপ অপেক্ষ করায় ফল পাওয়া যায়, এ বিশ্বাস বড়ো হয়েও গেল না। হারালে ফিরে আসবে বলে বসে থাকা চলত ছেলেবেলায়—এখন তা তো চলে না। খোঁজাখুজি, খানিক তম্বি-তম্ব, পুলিশ ডাক-ভাকিও করে থাকি ; কিন্তু মনে জানি, আছে কোথাও, একদিন দেখা দেবে হঠাৎ ৷ সেকালের একটা ঘটনা বলি ! বনস্পতি হীরের একটা আংটি বাবামশায় -মাঝে মাঝে ব্যবহার করতেন। হঠাৎ একদিন দেখা গেল—সোনাটা আছে, হীরেট পালিয়েছে কোথায়। তম্বি-তম্বা, খোজাখুজি, গোবিন্দ বলে একটা চাকর মেয়াদ খাটতে পর্যন্ত গেল। হঠাৎ একদিন কাপড়ের আলমারি ঝাড়ার সময় বেরিয়ে গেল হীরেটা। আলমারি ছিল বাবামহাশয়ের বুদ্ধ, বেহারার জিম্মেতে । জের করা মাত্র সে সাফ জবাব দিলে, বাবুমশায়ের ছাতার মধ্য থেকে ওটা টপ, করে একদিন পড়ল। ঝাড়ের কলম কি হীরে, সে কি জানে ? সে তুলে রেখেছে ওই আলমারিতে । অতি বিশ্বাসী বুদ্ধর বুদ্ধির দৌড় দেখে বৈঠকখানায় প্রচণ্ড হাসির রোল উঠল। গোবিন্দ খালাস হয়ে তিনশত টাকা বকশিশ পেয়ে পূর্ববৎ কাজে লেগে গেল । বনস্পতি রইলেন বন্ধ সিন্দুকে । খুব অল্প দিনের কথা—অনেক কষ্টে একটা কাকাতুয়া ধরলেম। পাখিটা দু-তিন বার শিকলি কেটে পালাল, ধরাও পড়ল। শেষে একদিন উধাও। কেদার চাকর শূন্ত দাড় হাতে এসে বললে, পাখি হারিয়েছে। তখন সন্ধ্যাকালে অন্ধকারে লুকিয়ে গেছে পাখি, আমি বলি, হারিয়েছে আসবে। মা হেসেই অস্থির। উড়ে পাখি ফেরে কখনো ? কেদারকে বললেম, দাড়ে প্রতিদিন -খাবার দিয়ে ঝুলিয়ে রাখ বাগানের সামনে । - একদিন গেল, দু দিন গেল, পাখির দেখা নেই। তিন দিনের দিন দেখি— -কোন সকালে এসে বসে আছে পাখি আপনার দাড়ে। সেই থেকে ছাড়া ছিল .সে পাখিটা। উড়ে যেত গাছে, ফিরে আসত দাড়ে। বাক্যকাল থেকে এ বিশ্বাস বদ্ধমূল হয়ে গেছে—ভুল বিশ্বাস নয় এটা। পুরীতে সমূত্রের তীরে থাকি, চোরে নিয়ে গেল ছেলেদের কাপড়ের বাক্সট ; জনেক খুঁজে বালির মধ্য থেকে বার হল বাক্স কাপড় সবই। কেবল পাওয় -গেল না একছড়া নতুন-কেন গলার হার, সোনার গোটা-কয়েক টাকা, আর
পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/৩৬৭
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।