জলছে – তাইতেই অসির আলে। মাৰে মাঝে তেলবাতির ফরাস এসে তেলবাতি বদলিয়ে দিয়ে যাচ্ছে। হরকরার সব পান দিয়ে যাচ্ছে। দরোয়ানরা গোক পাকিয়ে ঢাল-তরোয়াল নিয়ে একেবারে খাড়া, যেন দুগগা-ঠাকুরের অম্বর সব দাড়িয়ে উঠেছে। যাত্রার সময় সবাই রুমাল বেঁধে প্যাল দিতেন । আমাদেরও হাতে চাকরের রুমালে পয়সা বেঁধে দিয়ে বলত – ‘বাবুর যখন প্যাল দেবেন, তখন তোমরাও প্যাল দিয়ে। রুমাল স্বল্ক পয়সা ছুড়ে দিয়ে ভাবতুম রুমালখানা বুঝি আর ফেরত এল না। কিন্তু অধিকারী মশাই ঠিক আবার রুমাল থেকে টাকাপয়সা খুলে নিয়ে রুমালগুলো একত্র করে যার যার কাছে পৌঁছে দিতেন। যাত্রায় দেখতুম সব বালকের দল গান গাইতে বেরত। তাদের মাথায় সব পালকের টুপি। সে পালকের বাহার দেখে নাম দেওয়া হয়েছিল বকদেখানো পালকের টুপি । অধিকারী আসতেন যাত্রার আসরে চাপকান পরে। মাথায় সামূল চড়িয়ে, বুকে গার্ড-চেন ঝুলিয়ে। জুড়িদের শুধু শাদা কাপড়ের ইজের আর চাপকান। রাজাদের গালপাট'- মোড়াশা পাগড়ী— মন্ত্রীরও তাই, খালি যা পাকা গোফ । নারদ এখনো যেমন, তখনো তেমন । একরাশ পাটের দাড়ি গোফ, ছেড়া এক নামাবলী গায়ে—আর বাঁশের আগায় লাউখোলা ৰাধা কী একটা একতারার মতন নিয়ে দেখা দিতেন। ছেলের সব পেশোয়াজ আর নোলক পরে সখী সাজত । মাথায় জরি দিয়ে জড়ানো বিন্ধনী চুল। বুকে উকিলদের মতো ক'রে ওড়না জড়ানো। তবে কারুর কারুর গোফ-দাড়ি কামানো হয়ে উঠত না যে তাও দেখেছি। কী যে অভিনয় হত তা সব বুঝতে পারতুম না। তবে বেশ মনে আছে কখনে। কখনো চোখে জল এসে যেত। কখনো ভারি ভয় হত। কখনো হাসতুম, অথচ ভয় করত। ভীম, রাবণ, কংস ওদের হুংকার আর অ্যাকটিং শুনে বুক কেঁপে উঠত। তার ওপর ভীমের গদাটা ছিল ভারি কৌতুহলের জিনিল – ‘মোমজামা কাপড়ের খোলে তুলা ভর্তি করা থাকত যে, তা কি জানতুম। ওইটে ঘুরিয়ে হারে -রে -রে । ক'রে ভীম আসরে প্রবেশ করলেই পিলে চমকে যেত। এমনি সব দেখতে দেখতেই ভোর হয়ে যেত। ঝাড় আর গেলাস-বাতির সব আলো মিট্মিটে হয়ে আসত—দেখতুম কেউ ঘুমিয়ে পড়েছে— কেউ Woe
পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/৩৭৭
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।