পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/৩৭৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আবহাওয়া সেকালের আবহাওয়া একালে বদলে গেছে ; এখনকার মানুষই যেন অন্য রকম হয়ে জন্মাচ্ছে । সে মজলিস নেই, মজলিসী লোকও নেই। কিন্তু সেকালে আমাদের কী ছিল ? এই বাড়িতেই দেখেছি, যখন যেখানে যেমনটি প্রয়োজন ঠিক তেমনটি পাওয়া যেত ; সব যেন আগে থেকে তৈরি হয়ে আছে । বৈজ্ঞানিক হিসাবের সংকীর্ণতায় প্রাণবস্তুর কাটছাট তখনো শুরু হয় নি। নান প্রয়োজন এবং বাহুল্যের সরবরাহ করে মজলিসকে বাচিয়ে রাখা যাদের কাজ ছিল, সেই চাকর-বাকররাও ছিল তেমনিই, মজলিসের রস তাদেরও ছু য়ে যেত। আজকাল মজলিস নাম দেয় বটে, কিন্তু তাতে মজলিসত্ব কিছু নেই, তফাত বুঝতে পারি না— আনন্দসভায় আর শোকসভায় ; সেই সভাপতি, সেই উদবোধন সংগীত, সেই বস্তৃত, সেই সমাপ্তি সংগীত ৷ সবই আছে, মজলিসের প্রাণটুকুই শুধু নেই। সেকালের বৈঠকেরও এই দুৰ্গতি হয়েছে। সে আমলে এই মজলিস আর বৈঠক ছিল সত্যি, জীবন্ত, আমরাও তার শেষ রেশটুকু দেখেছি। ওবাড়িতে বসত বড়ে জ্যাঠামশাইদের বৈঠক সকালে ; বাবামশাই, বড়ে জ্যাঠামশাই সবাই বসতেন দক্ষিণের বারান্দায়। বড়ো জ্যাঠামশাই ‘স্বপ্নপ্রয়াণ লিখছেন, তাই নিয়ে অবিরত চলছে সাহিত্য-আলোচনা ; দার্শনিকের আসতেন, পণ্ডিতেরা আসতেন, নিজের নিজের সটক নিয়ে আসর জমিয়ে সবাই বসতেন ; অবাধে বইত সাহিত্যের হাওয়া। ছেলেবেলায় উকিঝুকি মেরে আমিও দেখেছি এই বৈঠকের চেহারা । সন্ধেয় বসত জ্যোতিকাকামশাইদের বৈঠক। এ বৈঠকের চেহার ছিল আর-এক রকম , সেখানে আসতেন তারক পালিত, ছোটাে অক্ষয়বাবু, কবি বিহারীলাল । রবিক বয়সে ছোটো হলেও এই বৈঠকেই যোগ দিতেন। এখানে মেয়েদেরও প্রবেশাধিকার ছিল। নতুন কাকীমা অর্থাৎ জ্যোতিকার স্ত্রী ছিলেন এই বৈঠকের কত্রী। এখানে চলত গান, বাজনা, কবিতার পর কবিতা পাঠ । এ-বাড়িতে বাবামশাইয়ের ছিল আলাদা বৈঠক, এখানে পাড়-পড়ণীর। ७é३