বরখাস্ত হয়েছিল তা সেও বলে নি, আমিও জানি নে। রামলাল যখন এলা আমার কাছে তখন সে ছোকরা আর আমি কত বড়ে মনেই পড়ে না, শুধু এইটুকু মনে আছে — আমি ধরা আছি তখনে আমাদের তিনতলার মাঝের হলটাতে। আশপাশের ঘরগুলো থেকে পাঁচ-সাতটা ধাপ উচুতে এই হলট। মস্ত ছাত, বারোটা পলতোলা মোট মোটা থামের উপর ধরা, থামের মাকে মাঝে লোহার রেলিঙ ৷ কড়ি বরগী থাম জানল। দরজার বাহুল্য নিয়ে মস্ত । ঘরটা যেন একট অরণ্য বলে মনে হত । সেকালের বড়ে বড়ো ঝাড় লণ্ঠন ঝোলাবার হুক আর কড়— সেগুলোকে দেখে মনে হত যেন সব টিকটিকি আর বাদুড় ঝুলে আছে মাথার উপরে— দিনের পর দিন একভাবেই আছে তাঁরা ! এই অনেক দ্বার, অনেক থাম, অনেক কড়ি-বরগা, প্রাচীর আর লোহার রেলিঙ-ঘেরা স্থানটা, এর মধ্যে মস্ত খাচীর ধরা ছোট্ট জীব – খাই দাই আর ঘুমোই ! এই খাচার বাইরে কী ঘটে চলেছে, কী বা আছে, কিছুই জানার উপায় গুনই ! এক-একবার চারদিকের জানলা ক'টা খুলে যায়— আলো আসে, বাতাস আসে, আবার ঝুপঝাপ বন্ধ হয় জানলা— এই করেই জানি সকাল হল, দুপুর এল, বিকেল হল, রাত হল । সম্পূর্ণ ছাড়া পাই নি তখনে আকাশের তলায়, চলতে ফিরতেও পারিনে ইচ্ছামতো । ਬਿ অন্য অংশগুলো থেকেও আলাদা করে ধরা আছি। দাসী দু-একটা কখনো কখনো বসে এসে ঘরটায়, তাদের দেশের কথা বলাবলি করে, মনিবদের গালাগালিও দেয চুপিচুপি ৷ একটা কালে বেড়াল, রোজই সন্ধ্যায় দেখা দেয়— কী খুজতে সে আসে কে জানে — এদিক-ওদিক চেয়ে আস্তে অন্ধকারে মিলিয়ে যায় ! খাট-পালঙগুলো নড়ে না চড়ে না—দিনের বেলায় বালিশ আর তেশকের পাহাড় সাজিয়ে বসে থাকে, আর সন্ধ্য হলে মশার ভন ভনানির মধ্যে ধুনোর দোয়াতে মশারির ঘোমটা টেনে দাড়িয়ে থাকে চুপচাপ। কেমন এক ফাকা ফাক ভাব জাগায় আমার মনে এই ঘরট। বৈচিত্র্য নেই বললেই হয় ঘরটার মধ্যে। কল্পনা করবারও কিছু নেই এখানটায় ! এই অবিচিত্র ফাকার মধ্যে রামলাল যখন আমাকে তার বাবু বলে স্বীকার করে নিলে তখন ভারি একটা আশ্বাস পেলেম । মনে আহলাদও হল— ऐडै>
পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/৩৮
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।