এসে বসত, তামাক, গান-বাজনা, খোশগল্প চলভ ; অক্ষয় মজুমদার টপ্পা গাইতেন ; অন্ধুরী তামাকের গন্ধে আসর মাত হয়ে থাকত। সেখানে আমাদের প্রবেশাধিকার ছিল না । সে-যুগের তিন রকম মজলিসের ছবি দিলুম। এই আবহাওয়ার মধ্যে রবিক বড়ো হয়েছেন । তখন সব দিকে সামঞ্জস্ত বজায় ছিল, শিল্প সাহিত্য গানের অফুরন্ত বিকাশের মধ্যে তিনি মানুষ। সে যুগে এমন বিদ্বজ্জন সমাগম আর কোথাও হত না । বঙ্কিমবাবু আসতেন। মনে আছে, একবার রবিকার ‘কাল-মৃগয়া' নাটকটি আগাগোড়া গান গেয়ে তাকে শোনানো হয়েছিল। আবছা মনে পড়ছে আমাদের উপর ভার ছিল ফুলদানি সাজাবার। সহবৎফুরস্ত ভালো কাপড় জামা পরে হাজির হবার হুকুম হল আমাদের উপর । একালের মতো এলোমেলে। অগোছালো ভাবে ছেলেরা যেখানে সেখানে যেতে পারত না । এই জীবনযাত্রার মধ্যে যিনি মানুষ, তিনি ষে সকলবিধ সামাজিক অনুষ্ঠানের প্রতি নিষ্ঠা দেখাবেন, সে আর বিচিত্র কী ? আমাদের এই বাড়ির জীবনযাত্র পুরাতন চালে অনেক দিন চলেছিল । আমাদের আমলেও এর জের ছিল কিছু। তারপর আস্তে আস্তে আজকালকার ক্লাবের স্বই হল, পুরাতন চাল বিদায় নিলে। যেমন বাইরে, অন্দরমুহলেও তেমনই দেখেছি গুরুজনের সম্পর্কে সমীহ করে চলার রেওয়াজ ; খাওয়া-দাওয়া, সাজ-পোশাকে তাদেরও একটু বেচাল হওয়ার জো ছিল না । একটা ঘটনার কথা আমার মনে পড়ছে, অরদ। একবার চা-বাগান থেকে ফিরে এলেন, একেবারে পুরোদস্তুর সাহেব—কোট-প্যাণ্ট হ্যাট টাই, কুলী খাটিয়ে মেজাজও হয়েছে সাহেবী । ইংরেজি ফ্যাশন-দুরস্ত সাজ পরে তিনি একদিন বাইরে বেরুচ্ছেন, দেউড়ির বাইরে এসেছেন, উপরের বারান্দ থেকে বড়ে জ্যাঠামশাইয়ের নজরে পড়ে গেলেন। অমনই শুরু হল হাকডাক । জ্যাঠামশাই উপর থেকেই বললেন, অরু, এই অভব্য বেশে তুমি চলেছ রাস্তায় ? একটা বিপর্যয় ব্যাপার ঘটে গেল। চাকর ছুটল, দরোয়ান ছুটল, অরুদার আর পাত্তাই পাওয়া গেল না। সাজ-পোশাকের দস্তুর তখন মেনে চলতেই হত— এক ছাটে বেরুনাে বারণ ছিল। বে-আইনী পোশাকে ছোটো ছেলেদেরও কাউকে যদি সদরে দেখা যেত, অমনই $ఆS
পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/৩৮০
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।