তলব পড়ত চাকরদের, কঠিন শাস্তি পেতে হত তাদের। আজ আর আমার কিছু বলবার নেই। আমি লুঙি পরে বসে আছি, আমাদের ছেলের -হাট-কোট পরছে। যা বলছিলুম। ইদানীং দেখছি, সব তফাত হয়ে গেছে। ছোটোখাটো স্মৃতি-সভ, টাউন হলের সভা, গান-বাজনার আসর সবই যেন এক রকম । বিয়ের বাসর আর মৃত্যু-বাসর সবই এক। এগুলো আমাদের বড়ে চোখে লাগে। রবিকাকে একবার বলেছিলুম, রবিক, একটা ব্যবস্থা করে। দেখি, এ রকম তে আর দেখতে পারি নে। সব অনুষ্ঠানগুলো তালগোল পাকিয়ে এক হয়ে গেল ! তিনি জবাব দিলেন না, চোখ বুজে রইলেন। রবিক এই যে ঋতুতে ঋতুতে উৎসব করতেন, তার মমের মধ্যে ঋতু অনুযায়ী বিভিন্ন অনুষ্ঠানের ঠিক রূপটি ধরা পড়ত। শান্তিনিকেতনে যে-সব অনুষ্ঠান হত, তার সমস্ত আয়োজন তার ব্যবস্থামত হত । কার পর কী হবে, কোথায় -কী থাকবে, কে কোথায় বসবে, আগে থাকতে সব ছ’কে দিতেন। একবার কলকাতাতে র্তার জন্ম-জয়ন্তী উপলক্ষে ওরিয়েণ্টাল আর্ট সোসাইটির শিল্পীরা ওঁকে সংবর্ধনা করেছিল। উৎসবের একটা ভালো রকম ব্যবস্থার জন্যে আমি ওঁকেই গিয়ে ধরলুম। সমস্ত অনুষ্ঠানের এমন-একটা রূপ দিয়ে দিলেন যে, বিস্মিত হতে হল। এই আমাকেই চেলীর জোড় পরিয়ে ক্ষিতিমোহনবাবুর বাছাই করা বৈদিকমন্ত্র পড়িয়ে তবে ছাড়লেন। আমি নিজে শিল্পী হয়ে র্তার শিল্প ও স্বযম-বোধের পরিচয় পেয়ে অবাক না হয়ে পারলুম না। এখন বুঝতে পারি, এই-সব অম্বষ্ঠান ঠিক ঠিক করবার জন্তে কর্তার যে শক্তি দরকার, তা তার মধ্যে ছিল। তার বিদায়ের সঙ্গে সঙ্গে সে শক্তিও বিদায় নিয়েছে। আমার মনে হচ্ছে, বাংলাদেশ থেকে অনুষ্ঠান জিনিসটাও বিদায় নেবে। রবিক কোনো জিনিস এলোমেলো অগোছালো ভাবে হওয়ার পক্ষপাতী ছিলেন না— এই শিক্ষা তিনি পুরানো যুগের আবহাওয়া থেকে সংগ্রহ করেছিলেন। কোনো অনুষ্ঠানে পান থেকে চুল খসবার জো ছিল না। সব ঠিক ঠিক হতেই হত। রবিকার সঙ্গে সঙ্গে এইসব অনুষ্ঠান, পুরানো যুগের সব স্মৃতি বিদায় নিলে। রবিক বলতেন, “দেখ, আমরা চলতে বলতে একভাবে শিখেছিলুম,
পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/৩৮১
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।