এতদিনে নিজস্ব কিছু পেলেম আমি ! রামলাল আসার পর থেকেই বাড়ির আদব-কায়দাতে দোরস্ত হয়ে ওঠার পালা শুরু হল আমার । একজন যে ছোটোকর্তা আছেন, তার যে একটা মস্ত বাড়ি আছে অনেক মহল, সেখানে যে পূজায় যাত্র বসে মথুর কুণ্ডুর — এ-সব জানলেম । অমনি না-দেখা বাড়ি না-দেখা মাতুষদের দিয়ে পরিচয় আরম্ভ হয়ে গেল বাইরেটাতে আর আমাতে । এই সময়টাতেই আরব্য উপন্যাসের এক টুকরোর মতো এই তিনতলার ঘরটার আগের কথা এবং আগের ছবিটাও পেয়ে গেলাম কার কাছ থেকে তা মনে নেই। এই বাড়িটাকে সবাই ডাকে তখন “বকুলতলার বাড়ি’ বলে । শুনেছি বাড়ি ছিল আগে এক তল বৈঠকখান । এর দক্ষিণের বাগানে ছিল মস্ত একটা বকুলগাছ—পাচপুরুষ আগে সেই গাছের নামে বাড়িখানা “বকুলতলার বাড়ি বলে চলছে— আমি যখন এসেছি তখনে । এমনি ছেলেবেলায় চোখে দেখছি যে-মস্ত-হলটাকে একেবারেই ফাক, শোনাকথার মধ্যে দিয়ে কল্পনাতে সেই বাল্যকালেই দেখতে পাই হলঘরটাকে স্থসজ্জিত, যখন লক্ষ্মী অচলা হয়ে আছেন কর্তার কাছে দিনরাত তখনকার আমলে । , সেই কালের এই হল— হল বললে ঠিক ভাবটা বোঝায় না—চণ্ডীমণ্ডপ তো নয়ই– বারো দোয়ারী কতকটা আভাস দেয়— কিন্তু ঠিক বুঝি যদি ভেবে নিই, একটা মস্ত জাহাজের ডেক, তিনতলার উপরে, জল থেকে তুলে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রমাণের অতিরিক্ত মোট মোট লম্বা লম্বা কড়ি থাম জানলা দরজা এবং আলো হাওয়া আfদবার জন্যে আবশ্বকের চেয়ে বেশি পরিমাণ ফাক দিয়ে প্রস্তুত আমাদের এই তিন তলার মাঝের ঘরটা । বাইরেটাকে একটুও না ঠেকিয়ে অথচ বাইরের উৎপাত রোদ, বৃষ্টি, লোকের দৃষ্ট ইত্যাদি থেকে সম্পূর্ণ আগলে অদ্ভুত কৌশলে প্রস্তুত করে গেছে ঘরধান কোন এক সাহেব মিক্সি– সেই মেপোলিয়ানের আমলের অনেক আগে ! এই সাহেবকে আমি যেন দেখতে পাচ্ছি— পরচুল পর, বেণী বাধা, কাসির মতো মস্ত গোল টুপিটা মাথায়, গায়ে খয়েরী রঙের সাটিনের কোট, পায়ে বার্নিশ জুতো বকলস দেওয়া, শর্ট প্যান্ট, হাটুর উপর পর্যন্ত মোজায় ঢাকা, গলায় একটা সিস্কের রুমাল ফুলের মতো ফাপিয়ে বাধা । সাহেব এসে উপস্থিত আমাদের কর্তার কাছে পালকি চড়ে । কর্তী সটকায় তখন তামাক খাচ্ছেন হাউসে যাবার পূর্বে। সাহেব মস্ত গোল পাথরের টেবিলে মন্ত একখানা বাড়ির
পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/৩৯
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।