পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/৪০০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পরে আমার বলার পালা পড়ল। বলতে উঠে দেখি– মনের মধ্যে এতটুকু ৷ স্মৃতি ধরা নেই সেই জানিত লোকটির, অথচ তাকে দেখি নি এমন নয়— কথা কয়েছি, দেখা হলে নমস্কার করেছি। কিন্তু সত্য করে স্মৃতির সঙ্গে জড়িয়ে পায় নি মন তাকে জগৎ-নাট্যশালায় এসে সবার স্মৃতি ধরে না তো মন। আর আজ এই সংবৎসর পরে মহারাজ জগদিন্দ্রনাথের স্মৃতি— সখ্যতার নানা গ্রন্থি দিয়ে বাধা যার স্মৃতি মনের অনেকখানি ঘিরে রয়েছে, সেই অকস্মাৎ হারানো বন্ধুর স্মৃতি— তাকে তে মোছা গেল না । লিখতে যাই ধরে ধরে— সেই যৌবনের প্রারম্ভ থেকে আজ পর্যন্ত মনের পাতায় পাতায় আলোঅন্ধকারের অক্ষর দিয়ে লেখা দেখছি সে-সব কথা, কিন্তু পারি নে তো লিখে উঠতে। পারি নে তো সাধারণে প্রকাশ করতে ভাষায় ! মন এসে হাত ধরে মিনতি করে বলে— চাহার দরবেশের এক দরবেশ তার কথা তো শেষ করেছে, সেট। যদি দরদী পাও তো বলে ; দরদ পাও তো বলে । মনের বাধ৷ ঠেলে তো লেখাও চলে না বলাও চলে না, অথচ বলতেও চাইছে আজ প্রাণ, কাজেই আমি মনের সঙ্গে যতটুকু বলতে পারি তাই বলছি— ‘তেহি নোদিবস গতাঃ”— যে-সব দিন যে-সব রাত চলে গেছে আমাদের এই বন্ধুটির সঙ্গে, সেই সব দিন রাত ফিরবে না তো ! কেবল স্মৃতিই রইল তাদের মনের কোণে ধর । এই জগদিন্দ্রনাথকে র্যারাই জানেন তারাই সবাই- কেউ সত্যভাবে জগদিন্দ্রনাথকে পান নি, পাবার উপায়ও নেই তাদের– হয়তে এটা একটু অপ্রিয় কথা কিন্তু সত্য কথা । সত্যভাবে যখনই পেলেম কিছু তখনি সত্য সত্য বলেম ‘কথং বিস্মর্যতে— কেন ভুলব যাকে পেয়ে গেছি ভাকে ? আমি যাকে সখ্যতার নিবিড় বেষ্টনে ধরে সত্যভাবে পেয়েছি— তাকে নানা স্মৃতি দিয়ে সাজিয়ে নানা কথা নানা ভাব দিয়ে সত্য করে ফুটিয়ে ধরি এত ইচ্ছা করি, কিন্তু শক্তি কোথায় আমার সে দুঃসাধ্য সাধনে ! শুধু মানুষটিকে আপনার করে পেলেই তো হয় না। তাকে আর সকলেরই আপনার করে পেলে তাতেই তো ঠিক ভাবে স্মৃতি রাখার উদ্দেশু সাধন করা হল। না হলে মহিষটির সম্বন্ধে কতকগুলি বাছ বাছ বিশেষণ ও বিজ্ঞাপন বিলি করে চুকিয়ে গেলেম কাজ। এতে করে যার স্মৃতি তার প্রতিই অন্যায় হল বলতে হয় ! এই শেষোক্ত কারণেই স্মৃতিসভায় যেতে আমি ইতস্তত করে থাকি । \రి