পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/৪১১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আমাদের পারিবারিক সংগীতচর্চা তখনকার কালের সংগীতের ইতিহাস– ওদিকে আমার মেসোমশায় পাথুরেঘাটার ছোটে রাজা শৌরীন্দ্রমোহন ঠাকুর কালোয়াতী গানের রীতিমত চর্চা করছেন। নর্মাল স্কুলের সঙ্গে সংগীতের ক্লাস খুললেন। ছোকরার দল— আমার সঙ্গীর, নরেন, ভূলু– সবাই সেখানে গান শিখছে। ক্ষেত্রমোহন গোস্বামী, মুলো গোপাল— বড়ে বড়ো সংগীতকার তার আসরে গান করেন। দেশী বাদ্যযন্ত্র সব বাজে সেখানে। রাজরাজড়ার বৈঠকে যা হয়, ঠিক তেমনি । র্তার বড়ে ছেলে প্রমোদকুমারও পাকা ইউরোপীয়ান মিউজিশিয়ান। তিনিই প্রথম কালোয়াতী গানকে স্বরলিপিতে বসিয়ে খুব নাম করলেন। গুরুদাস— শৌরীন্দ্রমোহন ঠাকুরের দৌহিত্র— সেও চমৎকার পিয়ানো বাজাতে পারত। আহা, মরে গেল বেচার অল্প বয়সেই। এদিকে আমাদের জোড়াসাকোর বাড়িতেও সংগীতচর্চা হচ্ছে। নবনাটক নাটক হল, জ্যোতিকাকামশায় অর্গান বাজালেন। সেইবারেই প্রথম অর্গান বাজল। শুনেছি, অক্ষয়বাৰু বলতেন আমারে, জ্যোতিকামশায়ের অর্গান শুনতে লোকের ভিড় জমে যেত। অর্গ্যানের সন্ধুে গান হবে। শুনতে রাস্তভরা লোকের ঠেলাঠেলি লাগত। জ্যোতিকামশায়ের গানবাজনার খুবই ক্টোক্ল ছিল। আর, সব নতুন নতুন বাজনার স্বর তৈরি করতেন। শৌরীন্দ্রমোহন ঠাকুরের আসরে ছিল সব দেশী বাদ্যযন্ত্র। জ্যোতিকামশায় বাজাতেন পিয়ানো,অর্গ্যান, বেহালা, বায়া-তবলা, মাঝে মাঝে আবার সব মিলিয়ে স্বরমণ্ডল বেঁধে স্বর বের করতেন। কোঁখেকে ইটালিয়ান বিকিট বের করে ফেললেন, দেখতে দেখতে বাল্মীকি প্রতিভার স্বত্ব তৈরি হয়ে গেল। স্বরলিপিটা তখন দু জায়গাই চলছে— পাথুরেঘাটায় প্রমোদকুমার করছেন, জ্যোতিকামশায়ও জোড়াসাকোতে করছেন। সে সময়ে সংগীতের কেমন একটা ধুয়ে উঠেছিল। সব নামজাদা বাড়িতেই বড়ে বড়ো ওস্তাদ রেখে সংগীতের চর্চা হত। আমাদের বাড়িতে মেয়েদের পর্যন্ত কালোয়াতী গান শেখানো হত। জ্যাঠামশায় প্রতিভাদিনের হিতাকে ওস্তা রেখে গান শিখিয়েছিলেন। তানপুর ধরে গাইতেন প্রতিভাদিদি। যেমন তাঁর গল ছিল, তেমনি পাক গাইয়েও হয়ে উঠেছিলেন। Woo