যদি দেখিয়ে দেন কী ভাবে লিখতে হবে, তবে তাই দিয়ে লেখা শুরু করতে পারি।” গুরুদেব আমাকে খুব উৎসাহ দিলেন ; বললেন, ‘তুই আজই আমাকে এনে দেখা কী লিখে রেখেছিস ।” দুপুরে আমার সেই লেখাগুলোই আর-একটু গুছিয়ে লিখে গুরুদেবের কাছে গেলুম। দুপুরের বিশ্রামের পর কোঁচে উঠে বসেছেন ; বললেন, ‘কই, এনেছিস ? দেখি। লেখাগুলো হাতে দিলুম, তিনি আগাগোড়া এক নিশ্বাসে পড়লেন। বললেন, ‘এ অতি সুন্দর হয়েছে। অবন কথা কইছে, আমি যেন শুনতে পাচ্ছি । কথার একটানা স্রোত বয়ে চলেছে— এতে হাত দেবার জায়গা নেই, যেমন আছে তেমনই থাকৃ।’ পরে তার ইচ্ছানুযায়ী ‘প্রবাসী’তে সেটি ছাপা হয় ।১ গুরুদেব খুব খুশি । আমাকে প্রায়ই বলতেন, ‘অবন বসে লিখবার ছেলে নয়, আর কোমর বেঁধে লিখলে এমন সহজ বাণী পাওয়া যাবে না । তুই যত পারিস ওর কাছ থেকে আদায় করে নে।’ জুনের শেষ দিকে একবার গুরুদেব আমাকে কিছুদিনের জন্ত কলকাতায় পাঠান গল্প-সংগ্রহ করার কাজে । সে সময়ে গুরুদেবের গল্প বা কবিতা লেখার কাজ আমরা যারা কাছাকাছি থাকতুম, আমরাই করতুম । আঙুলে কী রকম একটা ব্যথা হয়, উনি লিখতে পারতেন না, কষ্ট হত । মুখে মুখে বলে যেতেন, আমরা লিখে নিতুম । তাই সে সময়ে কলকাতায় যাবার আমার ইচ্ছ.ছিল না । অথচ গুরুদেব গল্প শুনতে চাইছেন—সেও একটা কাজ। কী করি। গুরুদেব বললেন, ‘তুই ভাবিস নে, তোর জায়গা কেউ নিতে পারবে না—এই মুখ বন্ধ করলুম, আর মুখ খুলব তুই ফিরে এলে।’ বলে হেসে মুখে আঙুল চাপা দিলেন। কলকাতায় এলুম—জোড়াসাকোর বাড়িতেই থাকি। অবনীন্দ্রনাথও ১ প্রবাসী’তে মুদ্রিত রচনাটি বস্তুত জোড়ার্সাকোর ধারে’ গ্রন্থের অংশ, এর সপ্তদশ অধ্যায় । ‘আমার ছবি ও বই লিখতে শেখ এবং আমার মাষ্টারী’ শিরোনামে লেখাটি ছাপা হয়েছিল ১৩৪৮ সালের বৈশাখ মাসে । অপরপক্ষে, ‘ঘরোয়া’র অল্প কিছু অংশ (একাদশ অধ্যায় ) ‘রবিকাবণর গান’ নামে ছাপা হয় ১৩৪৮ সালের আষাঢ় মাসে "কবিতা" পত্রিকায়, ঈষৎ ভিন্ন পাঠে । ويe 8
পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/৪২৩
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।