গুরুদেবকে প্রণাম করতে গেছি—তখন অপারেশন হবে কথাবার্তা চলছে ; গুরুদেব কোঁচে বসে ছিলেন, কেমন যেন বিষন্নভাব। প্রণাম করে উঠতে তিনি আমার পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে ধীরে ধীরে বললেন, ‘অবনকে গিয়ে বলিস, আমি খুব খুশি হয়েছি। আমার জীবনের সব বিলুপ্ত ঘটন। যে অবনের মুখ থেকে এমন করে ফুটে উঠবে, এমন স্পষ্ট রূপ নেবে, তা কখনো মনে করি নি। অবনের মুখ থেকে আজ দেশের লোক জাকুক তার রবিকাকাকে।’ অবনীন্দ্রনাথের সত্তর বছরের জন্মদিনে দেশের লোক চুপ করে থাকবে এটা গুরুদেবকে বড়োই বিচলিত করেছিল । তিনি আশেপাশের সবাইকে সেটা বলতেন । ১২ই জুলাইও তিনি বলেছেন, “আমি অবনের জন্য চিন্তা করছি। এটা অবজ্ঞা করে ফেলে রাখা ঠিক হবে না । সময় নেই, একটা-কিছু বিশেষ ভাবে করা দরকার।’ এবারে কলকাতায় এসেও তিনি সবাইকে বলেছেন, ‘অবন কিছু চায় না, জীবনে চায় নি কিছু। কিন্তু এই একটা লোক যে শিল্পজগতে যুগপ্রবর্তন করেছে, দেশের সব রুচি বদলে দিয়েছে । সমস্ত দেশ যখন নিরুদ্ধ ছিল, এই অবন তার হাওয়! বদলে দিলে । তাই বলছি, আজকের দিনে এ কে যদি বাদ দাও তবে সবই বৃথা ।” অবনীন্দ্রনাথের জন্মদিনে উৎসব করা নিয়ে তার নিজের ঘোরতর আপত্তি। এ বিষয়ে কেউ তার কাছে কিছু বলতে গেলে তাড়া খেয়ে ফিয়ে আসেন। সেবারে যখন কলকাতায় আসি • গুরুদেব আমাকে বলেছিলেন, ‘তুই নাহয় আমার নাম করেই অবনকে বলিস।” কিন্তু আমারও কেমন ভয়-ভয় করল। কারণ, একদিন দেখলুম, নন্দদা এ বিষয়ে অবনীন্দ্রনাথকে বলতে এসে একবার বলবার জন্য এগিয়ে যান, আবার সরে আসেন, এদিক-ওদিক ঘোরাফেরা করেন । শেষ পর্যস্ত তিনিও কিছু বলতে পারলেন না—অবনীন্দ্রনাথ একমনে পুতুলই গড়ে চললেন, তার ও দিকে খেয়ালই নেই। তাই এবারে. যখন গুরুদেব কলকাতায় এসে জিজ্ঞেস করলেন, ‘অবনের জন্মোৎসবের কতদূর কী এগোল, স্থযোগ বুঝে নালিশ্ন করলুম। গুরুদেব অবনীন্দ্রনাথকে খুব ধমকে দিলেন, মা যেমন দুষ্ট্র ছেলেকে দেয়। বললেন, ‘অবন, তোমার 8>>
পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/৪২৮
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।