এ-বাড়ি ও-বাড়ি কেবলই দূর থেকে জগৎটাকে দেখে চলার অবস্থাটা কখন যে পেরিয়ে গেলেম তা মনে নেই। আমাদের বাড়ির পাশেই পুরোনো বাড়িতে প্রহরে প্রহরে একটা পেটা-ঘড়ি বাজত বরাবরই। এবং ঘড়ির শব্দটাও এ-তল্লাটের সবার কানে পোছত, কেবল আমারই কাছে তখন ঘড়ির শব্দ বলে একটা কিছু ছিল না। এমনি বাড়ির মানুষদের বেলাতেও— এপারে আমি ওপারে তারা ! অপরিচয়ের বেড়া কবে কেমন করে সরল— সেটা নিজেই সরালেম কি রামলাল চাকর এসে ভেঙে ফেলে দিলে সেট, তা ঠিক করা মুশকিল ! রামলাল আসার পর থেকে অন্দবের ধরাবাধা থেকে ছাড়া পেলেম । বাড়ির দোতলা একতলা এবং আস্তে আস্তে ও-বাড়িতেও গিয়ে ঘূরিফিরি তখন, চোখ-কান হাত-পা সমস্তই যখন আশপাশের পরিচয় করে নিচ্ছে, সে-বয়েসটা ঠিক কত হবে তা বলা শক্ত— বয়েসের ধার তখন তো বড়ো একটা ধারি নে, কাজেই কত বয়স হল জানবারও তাড় ছিল না ! এই যখন অবস্থা, তখন কতকগুলো শ আর রূপ একসঙ্গে, যেন দুরে থেকে এসে আমার সঙ্গে পরিচয় করে নিতে চলেছে দেখি ! জুতো, খড়ম, খালি-পা জনে জনে রকম রকম শব্দ দেয়। তাই ধরে প্রত্যেকের আসা-যাওয়া ঠিক করে চলেছি। দাসী চাকর কেউ আসছে, কেউ যাচ্ছে— কাঠের সিড়িতে তাদের এক-একজনের পা একএকরকম শব্দ দিয়ে চলেছে। এই শব্দগুলো অনেক সময় শাস্তি এড়ানোর পক্ষে খুব কাজে আসত। বাবামশায় লাল রঙের চামড়ার খুব পাতলা চটি ব্যবহার করতেন। তার চল এত ধীরে ধীরে ছিল যে অনেক সময়ে হঠাৎ সামনে পড়তেম তার। একদিনের ঘটনা মনে পড়ে। সিড়ির পাশেই বাবামশায়ের শয়ন-ঘর, আমি সঙ্গী কাউকে হঠাৎ চমকে দেবার মতলবে দু’খানা দরজার আড়ালে লুকিয়ে আছি, এমন সময়ে দেয়ালে ছায়া দেখে একটা হুংকার দিয়ে যেমন বার হওয়া দেখি সামনেই বাবামশায় ! এখনকার ছেলেদের হঠাৎ বাবা দাদা কিংবা আর.কোনো গুরুজনের সামনে এসে পড়াটা দোষের নয়, কিন্তু সেকালে সেটা একটা ভয়ংকর বেদস্তুর বলে গণ্য হত। সেবারে আমার কান আমাকে ঠকিয়ে বিষম মুশকিলে ফেলেছিল। wed: “
পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/৪৪
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।