পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/৪৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পায় না, ফটকে গাড়িবারান্দায় গাড়ি-ঘোড়া ঢোকে বেরোয় সোয়ারি নিয়ে ধীরে ধীরে ; বাবামশায়, মা, পিসি-পিসে, এ-বাড়ি ও-বাড়ির সবাই যেন সর্বদ। তটস্থ। চাকর-চাকরানীদের চেঁচামেচি ঝগড়াঝাটি বন্ধ, সবাই ফিটফাট হয়ে ঘোরাফেরা করছে যেন ভালোমানুষটির মতো ! এই-সব দেখেশুনে কর্তার নাম হলে কেমন যেন একটু ভয়-ভয় করত। কর্তাদাদামশায়কে একবার কাছে গিয়ে দেখে নেবার লোভ, কর্তার সামনাসামনি হয়ে তার ঘরখানা দেখারও কৌতুহল থেকে থেকে জাগত মনে ! কর্তার ঘরে ঢুকতে সাহসে কুলত না। কিন্তু চুপি চুপি ঘরের দিকে অনেক সময়ে এগিয়ে যেতেম। দরোয়ান সব সময়ে পেট-ঘড়িকে পাহার দিয়ে বসে থাকত না, সিদ্ধি ঘোটার সময় ছিল তার একটা । সেই একদিন-একদিন ঘড়ির সঙ্গে ভাব করতেও এগিয়ে যেতেম। পাছে ধরা পড়ি সেই ভয়ে হাতুড়ি তোলার অবসর হত না, দুই হাতে ঘড়িটাকে চাপড় কশিয়ে দিতেম। দড়িতে বাধা ঘড়ি লাটিমের মতে ঘুরতে থাকত, যেন একঝাক ভীমরুলের মতো গুমরে উঠত রেগে। ঘড়ির শব্দ আকস্মিক একটা ভয় লাগাত— কর্তা বুঝি শুনলেন, দরোয়ান এল বুঝি-ব। ঘড়ির কাছে থাকা নিরাপদ নয় জেনে এক ছুটে আমাদের তিনতলার ঘরে হাজির হতেম ; তার পর সারাক্ষণ যেন দেখতেম— দরোয়ান কর্তার কাছে আমার নামে নালিশ করছে ; সঙ্গে সবে কর্তা ডাকলে কী কী মিছে কথা বলতে হবে তার ফর্দ একটাও তৈরি করে চলত মন তখন । কর্তামশায় সব সময়ে বাড়িতে থাকেন না— বোলপুরে যান, সিমলের পাহাড়ে যান— আবার হঠাৎ একদিন কাউকে কিছু না বলে ফিরে আসেন। হঠাৎ নামেন কর্তা গাড়ি থেকে ভোরে, দরোয়ানগুলো ধড়মড় করে খাটিয়া ছেড়ে উঠে পড়ে, এ-বাড়ি ও-বাড়ি সাড়া পড়ে যায়— কর্তা এসেছেন। এই সময়টায়ও দেখতেম— আমাদের বৈঠকখানায় দু'বেল গানের মজলিস খুব আস্তে চলেছে। কাছারি বসছে নিয়মিত দশটা-চারটে । দক্ষিণের বাগানে বৈকালে বিশ্বেশ্বর হু কোবরদার বড়ে বড়ো রুপোর আর কাচের সটকাগুলো বার করে দেয় না। বিলিয়ার্ড-রুমে আমাদের কেদারদাদার হাক-ডাক একেবারে বন্ধ। যত সব গম্ভীর লোক, তারা পুরোনো বাড়িতে সকাল-সন্ধ্যt আসা-যাওয়া করেন— কেউ গাড়িতে, কেউ বা হেঁটে। আমাদের উপর হুকুম ՎՏԵր