পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/৫২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

এই মাঘোৎসবে ভোজের বিরাটরকম আয়োজন হত তিনতলা থেকে একতলা। সকাল থেকে রাত একটা দুটো পর্যন্ত খাওয়ানো চলত। লোকের পর লোক, চেনা, অচেনা, আত্মপর, যে আসছে খেতে বসে যাচ্ছে। আহারের পর বেশ করে হাতমুখ ধুয়ে, পান ক’টা পকেটে লুকিয়ে নিয়ে, মুখ মুছতে মুছতে সরে পড়ছে— পাছে ধরা পড়ে অন্যের কাছে এরা সবাই। মাঘোৎসবের ভোজ আর মেঠাই, অনেকেই খেয়ে বাইরে গিয়ে খাওয়াদাওয়া ব্যাপারটা সম্পূর্ণ অস্বীকার করেও চলেছে এও আমি স্বকর্ণে শুনেছি, তখনকার লোকের মুখেও শুনতেম! মাঘোৎসবের লোকারণ্যের মাঝখানে কর্তাকে পরিষ্কার করে দেখে নেওয়া মুশকিল ছিল আমার পক্ষে। অনেকদিন পরে একবার কর্তাদাদামশায়কে সামনাসামনি দেখে ফেললেম। সকালবেলায় উত্তরের ফটকের রেলিঙগুলোতে পা রেখে ঝুল দিচ্ছি এমন সময় হঠাৎ কর্তার গাড়ি এসে দাড়াল । লম্বা চাপকান, জোব্বা, পাগড়ি পরে কর্তা নামছেন দেখেই দৌড়ে গিয়ে প্রণাম করে ফেললেম । ভারি নরম একখান হাতে মাথাটাকে আমার ছুয়েই কর্তা উপরে উঠে গেলেন। বাড়িতে তখন খবর হয়ে গেছে— কর্তামশায় চীনদেশ থেকে ফিরেছেন । আমি যে কর্তাস্তে দেখে ফেলেছি, প্রণামও করেছি, সব আগেই সেটা মায়ের কানে গেল । ময়লা কাপড়ে কর্তার সামনে গিয়ে অন্যায় করেছি বলে একটু ধমকও খেলেম, আর তখনই রামলাল এসে আমাকে ধরে পরিষ্কার কাপড় পরিয়ে ছেড়ে দিলে । এই হঠাৎ-দেখার কিছুক্ষণ পরে, কর্তার কাছ থেকে আমাদের সবার জন্তে একটা-একটা চীনের বানিশ-করা চমৎকার কোঁটে এসে পড়ল, তার সঙ্গে গোটাকতক বীরভূমের গালার খেলনা। আমার বাক্সটা ছিল রুহৗতনের আকার, তার উপরে একটা উড়ন্ত পাখি আঁকা। আর গালার খেলনাট ছিল একটা মস্ত গোলাকার কচ্ছপ। এর পরেই ম আর আমার দুই পিসির জন্তে, হাতির দাতের নৌকা আর সাততলা চীনদেশের মন্দির, কর্তার কাছ থেকে বাবামশায় নিয়ে এলেন । চীনের সাততলা মন্দিরটার কী চমৎকার কারিগরিই ছিল । ছোট ছোট্ট ঘণ্টা ঝুলছে, হাতির দাতের টবে হাতির দাতেরই গাছ, মাহ্য সব দাতে তৈরী, 8 S