বারবাড়িতে সেকালের নিয়ম অনুসারে একটা বয়েস পর্যন্ত ছেলেরা থাকতেম অন্দরে ধরা, তার পর একদিন চাকর এসে দাসীর হাত থেকে আমাদের চার্জ বুঝে নিত। কাপড় জুতো জামা বাসন-কোসনের মতো করে আমাদের তোশাখানায় নামিয়ে নিয়ে ধরত ; সেখান থেকে ক্রমে দপ্তরখানা হয়ে হাতে-খড়ির দিনে ঠাকুরঘর, শেষে বৈঠকখানার দিকে আস্তে আস্তে প্রমোশন পাওয়া নিয়ম ছিল । রামলাল যতদিন আমার চার্জ বুঝে নেয় নি ততদিন আমি ছিলেম তিন তলায় উত্তরের ঘরে। সেইকালে একবার একটা সূর্যগ্রহণ লাগল— থালায় জল রেখে স্বর্য দেখে একটা পুণ্য কাজ করে ফেলেছিলেম সেদিন । মনে পড়ে সেই প্রথম একটা ছাতে বার হয়ে আকাশ দেখলেম— নীল পরিষ্কার আকাশ । তারই তুলায় একটা পুকুর— আমাদের দক্ষিণের বাগানের এইটুকুই চোখে পড়ল সেইদিন । এই দক্ষিণের বাগান ছিল বারবাড়ির সামিল— বাবুদের চলাফেরার স্থান । এখন যেমন ছেলেপিলে দাসী চাকর রাস্তার লোক এবং অন্দরের মেয়েরা পর্বস্ত এই বাগান মাড়িীয় চলাফের করে, সেকালে সেটি হবার জো ছিল না । বাবামশায়ের শখের বাগান ছিল এটা— এখানে পোষা সারস পোষা ময়ূর— তার কেউ হাটুজলে পুকুরে নেমে মাছ শিকার করত, কেউ প্যাখম ছড়িয়ে ঘাসের উপর চলাফেরা করত । তিন-চারটে উড়ে মালিতে মিলে এখানে সব শখের গাছ আর খাচার পাখিদের তদবির করে বেড়াত, একটি পাতা কি ফুল ছেড়ার হুকুম ছিল না করে । এই বাগানে একটা মস্ত গাছ-ঘর— সেখানে দেশ-বিদেশের দামী গাছ ধরা থাকত ! পদ্মফুলের মতে করে গড় একটা ফোয়ার — তার জলে লাল মাছ, সব আফ্রিকা দেশ থেকে আনানো, নীল পদ্মপাতার তলায় খেলে বেড়াত ! বাড়িখানা একতলা দোতলা তিনতলা পর্যন্ত, পাখিতে গাছেতে ফুলদানিতে ভর্তি ছিল তখন। মনে পড়ে দোতলায় দক্ষিণের বারান্দার পুবদিকে একটা মস্ত গামলায় লাল মাছ ঠাসা থাকে, তারই পাশে দুটো শাদা খরগোশ, জাল-ঘেরা মস্ত খাচার মধ্যে সব ছোটো ছোটো পোষা পাখির বাক, দেওয়ালে একটা হরিণের শিঙের উপর BS
পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/৫৪
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।