পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/৫৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বসে লালকুটি মস্ত কাকাতুয়া, শিকলি-বাধা চীন দেশের একটা কুকুর— নাম তার কামিনী— পাউডার এসেন্সের গন্ধে কুকুরটার গা সর্বদা ভুরভুর করে। তখন বেশ একটু বড়ো হয়েছি, কিন্তু বৈঠকখানার বারান্দায় ফল করে যাবার সাধ্য নেই, সাহসও নেই। এখন যেমন ছেলেমেয়েরা ‘বাবা' বলে হুটু করে বৈঠকখানায় এসে হাজির হয় তখন সেটা হবার জে ছিল না । বাবামশায় যখন আহারের পর ও-বাড়িতে কাছারি করতে গেছেন সেই ফাকে এক-এক দিন বৈঠকখানায় গিয়ে পড়তেম। টুনি’ বলে একটা ফিরিঙ্গী ছেলেও এই সময়টাতে পাখি চুরি করতে এদিকটাতে আসত। পাখিগুলোকে খাচা খুলে উড়িয়ে দিয়ে, জালে করে ধরে নেওয়া খেলা ছিল তার । টুনিসাহেব একবার একটা দামী পাখি উড়িয়ে দিয়ে পালায়। দোষটা আমার ঘাড়ে পড়ে। কিন্তু সেবারে আমি টুনির বিদ্যে ফাস করে দিয়ে রক্ষে পেয়ে যাই। আর-একদিন —সে তখন গরমির সময়— দক্ষিণ বারান্দাটা ভিজে খসখসের পরদায় অন্ধকার আর ঠাও হয়ে আছে; গামল ভর্তি জলে পদ্মপাতার নীচে লাল মুছগুলোর খেলা দেখতে দেখতে মাথায় একটা দুবুদ্ধি জোগাল। যেমন লাল মাছ, তেমনি লাল জলে এরা খেলে বেড়ালেই শোভা পায় । কোথা থেকে খানিক লাল রঙ এনে জলে গুলে দিতে দেরি হল নী, জলটা লালে লাল হয়ে উঠল। কিন্তু মিনিট কতকের মধ্যেই গোট দুই মাছ মরে ভেসে উঠল দেখেই বারান্দ ছেড়ে চে চে দৌড়- একদম ছোটোপিসির ঘরে । মাছ মারার দায় থেকে কেমন করে, কিভাবে যে রেহাই পেয়েছিলেম তা মনে নেই, কিন্তু অনেকদিন পর্যন্ত আর দোতলায় নামতে সাহস হয় নি। মনে আছে আর-একবার মিস্ত্রি হবার শখ করে বিপদে পড়েছিলেম। বাবামশায়ের মনের মতো করে চীনে মিস্ত্রিরা চমৎকার একটা পাখির ঘর গড়ছে – জাল দিয়ে ঘেরা একটা যেন মন্দির তৈরি হচ্ছে, দেখছি বসে বসে। রোজই দেখি, আর মিস্ত্রির মতে হাতুড়ি পেরেক অস্ত্রশস্ত্র চালাবার জন্য হাত নিসপিস করে। একদিন, তখন কারিগর সবাই টিফিন করতে গেছে, সেই ফাকে একটা বাটালি আর হাতুড়ি নিয়ে মেরেছি দু-তিন কোপ। ফল করে বঁ হাতের বুড়ে আঙুলের ডগায় বাটালির এক ঘ। খাচার গায়ে দু-চার ফোটা রক্ত গড়িয়ে পড়ল। রক্তটা মুছে নেবার সময় নেই– তাড়াতাড়ি বাগান থেকে খানিক ধুলো বালি দিয়ে যতই রক্ত থামাতে চলি ততই বেশি