পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/৫৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

একটা ময়ুর, রঙিন ফুলদানি কত রকমের। সে যেন একটা ঠুনকে রাজত্বে গিয়ে পড়তেম। এ ছাড়া একটা আলমারি, তাতে দেকালের বাংলা-সাহিত্যে বা-কিছু ভালো বই সবই রয়েছে। এই ঘরের মাঝে ছোটোপিসি বসে বসে সারাদিন পুতি-গাথা আর সেলাই নিয়েই থাকেন । বাবামশায় ছোটোপিসিকে সাহেব-বাড়ি থেকে সেলাইয়ের বই, রেশম কত কী এনে দিতেন আর তিনি বই দেখে দেখে নতুন নতুন সেলাইয়ের নমুনা নিয়ে কত কী কাজ করতেন তার ঠিক নেই। ছোটোপিসি এক জোড়া ছোট বালা পুতি গেথে গেথে গড়েছিলেন – সোনালি পুতির উপরে ফিরোজার ফুল বসানো ছোট বালা দু’গাছি, সোনার বালার চেয়েও টের সুন্দর দেখতে । বিকেলে ছোটোপিসি পায়রা থাওয়াতে বসতেন । ঘরের পাশেই খোলা ছাত ; সেখানে কাঠের খোপে, বাশের খোপে, পোষা থাকত লক্কা, সিরাজী, মুক্ষি কত কী নামের আর চেহারার পায়রা । খাওয়ার সময় ছোটোপিসিকে ডানায় আর পালকে ঘিরে ফেলত পায়রাগুলো। সে যেন সত্যিসত্যিই একটা পাখির রাজত্ব দেখতেম— উচু পাচিল-ঘের ছাতে ধরা। বাবামশায়েরও পাখির শখ ছিল, কিন্তু র্তার শখ দামী দামী খাচার পাখির, ময়ুর সারস র্হাস এই সবেরই। পায়রার শখ ছিল ছোটোপিসির । হাটে হাটে লোক যেত পায়রা কিনতে। বাবামশায় তাকে দুটাে বিলিতি পায়রা এক সময়ে এনে দেন, ছোটোপিসি সে দুটোকে ঘুঘু বলে স্থির করেন, কিছুতেই পুষতে রাজী হন না। অনেক বই খুলেও বাবামশায় যখন প্রমাণ করতে পারলেন না যে পাখি দুটে ঘুঘু নয়, তখন অগত্য সে দুটে রটলেজ সাহেবের ওখানে ফেরত গেল ! এরই কিছুদিন পরে একটা লোক ছোটোপিসিকে এক জোড়া পায়রা বেচে গেল— পাখি দুটো দেখতে ঠিক শাদা লক্কা, কিন্তু লেজের পালক তাদের ময়ুরপুচ্ছের মতে রঙিন। এবার ছোটোপিসি ঠকলেন— বাবামশায় এসেই ধরে দিলেন পায়রার পালকে ময়ূরপুচ্ছ স্বতো দিয়ে সেলাই কর । একটা তুমুল হাসির হরর উঠেছিল সেদিন তিনতলার ছাতে, তাতে আমরাও যোগ দিয়েছিলেম । ঠাকুরপুজো, কথকতা, সেলাই আর পায়রা – এই নিয়েই থাকতেন ছোটোপিসি । একবার তার তিনতলার এই ছাতটাতে, বাড়িম্বদ্ধ সবার ফোটো নিতে এক মেম এসে উপস্থিত হল। আমাদেরও ফোটে নেবার 8 W5