পুজোর ঘর থেকে একটা বাতাসা চিবোতে চিবোঙে ফিরতে থাকলেম এবারে । একেবারে একতলায় যোগেশদাদার দপ্তরে এসে একতাড়া তালপাত কঞ্চির কলম ও মাটির নতুন দোয়াত নিতে হল, বাড়ির বুড়ে অধিবুড়ে ছোকর কর্মচারী সবারই পায়ের ধুলো ও আশীর্বাদের সঙ্গে— এও মনে আছে । তার পর সদরে-অন্দরে সবাইকে দেখা দিয়ে কোথায় গেলেম, কী করলেম কিছুই মনে নেই। কিন্তু তার পরদিনই আবার সরস্বতী পুজোয় দোয়াত, কলম, বই, শেলেট রামলাল দিয়ে এল, তা মনে পড়ে কিন্তু । গুরুমশায় বলে সেদিনের একটা কেউ আমার মনের খোপে ধরা নেই হাতেখড়ির সকালটার সঙ্গে । একটা অসমাপিকা ক্রিয়ার মতো এই হাতে-খড়ি ব্যাপারটা। এরই মতো আরো কতকগুলো অসমাপ্ত, কতকটা বায়োস্কোপের টুকরো ছবির মতো, মনের কোণে রয়েছে জমা । খুব ছোটোবেলার একটা ঘটনার কথা। সেটা শুনে-পাওয়া সংগ্রহ মনেব —ম বলতেন— আমাকে নিয়ে কাটোয়াতে যাচ্ছেন ছোটোপিসিমার শ্বশুরবাড়ি। পথে ধানক্ষেতের মাঝ দিয়ে পালকি চলেছে। সঙ্গের দাসী একগোছ ধানের শীষ ভেঙে মাকে দিয়েছে ; তারই একটা শীষ মা দিয়েছেন আমাকে খেলতে। মা চলেছেন অন্তমনে মাঠ-ঘাট দেখতে দেখতে, বন্ধ পালকির • ফাকে চোখ দিয়ে " সেই ফাকে হাতের ধান-শীষ মুখের মধ্যে দিয়ে গিয়ে আমার গলায় বেধে দম বন্ধ করে আর কি ! এমন সময়— । এ ঘটনা বারবার বলতেন মা, কিন্তু এ ঘটনা কোনো কিছু স্মৃতি কি ছবির সঙ্গে জড়িয়ে দেখতে পেত না মন । যেন মনের ঘুমন্ত অবস্থার ঘটনা এটা জন্মের পরের, কিন্তু মনের ছাপাখানা খোলার পূর্বের ঘটনা। পুরোনো বৈঠকখানা-বাড়িটা অনেক অদলবদল জোড়াতাড়া দিয়ে হয়েছে জোড়াসাঁকোর আমাদের এই বসতবাড়িটা। খাপছাড়া রকমের অলি, গলি, সিড়ি, চোরকুঠরি, কুলুঙ্গি ইত্যাদিতে ভরা এই বাড়ি, খানিক সমাপ্ত ৰানিক অসমাপ্ত ছবি ও ঘটনার ছাপ আপনা হতেই দিত তখন মনের উপরে। অন্দরবাড়ি থেকে রান্না-বাড়িতে যাবার একটা গলিপথ , ছোটোখাটো একটা উঠোনের পশ্চিম গায়ে, সরু দুটো মেটে সিড়ির মাথায়, দোতলার উপর ধরা এই গলিটার পশ্চিম দেওয়ালে পিছম দেবার একটা কুলুঙ্গি । ● ●
পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/৬৪
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।