পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/৬৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাড়ির আর সব কুলুঙ্গি ক’টা ছিল মেঝে ছেড়ে অনেক উপরে, ছোটো আমাদের নাগালের বাইরে। কিন্তু এই কুলুঙ্গিটা – ঠিক একটি পূর্ণ চন্দ্র যত বড়ো দেথা যায় তত বড়ো— আর সব কুলুঙ্গি থেকে স্বতন্ত্র হয়ে মেঝে থেকে নেমে পড়েছিল । দেখে মনে হত সেটাকে, যেন একটা রবারের গোলা, ভূয়ে পড়ে একটু লাফিয়ে উঠে শূন্যে দাড়িয়ে গেছে। লুকোবার অনেকগুলো জায়গা ছিল আমাদের, তার মধ্যে এও ছিল একটা । ইদুর যেমন গর্তে গুটিমুটি বসে থাকে, তেমনি এক-একদিন গিয়ে বসতেম সকারণে, অকারণেও। পুব-পশ্চিমে দেওয়াল-জোড় গলি, ছাওয়া দিয়ে নিকোনো । নানা কাজে ব্যস্ত চাকর-দাসী, তারা এই পথটুকু চকিতে মাড়িয়ে যাওয়া-আসা করে— আমাকে দেখতেই পায় না । আমি দেখি তাদের খালি কালো কালো পায়ের চলাচল । ঠিক আমার সামনেই একতলার ঘরের একটা মেটে সিড়ি একতলার একটা তালাবন্ধ সেকেলে দরজার সামনে পা রেখে, দোতলায় মাথা রেখে, আড়ি হয়ে পড়ে থাকে— যেন একটা গজগীর দৈত্য আজব শহরের তেল-কালি-পড়া সিংহদ্বার আগলে ঘুম দিচ্ছে এই ভাব। এল-মাটির উপরে সোতা অন্ধকার —তারই দিকে চেয়ে বসে থাকি লুকিয়ে চুপচাপ। বেশিক্ষণ একলা থাকতে হত না, ঘড়ি ধরে ঠিক সময়ে সিড়ির গোড়ায় বিছিয়ে পড়ত রোদ– একখানি সোনায় বোন নতুন মাদুর যেন । থাকতে থাকতে এরই উপর দিয়ে আগে আসত এক ছায়া, তার পাছে প্রার ছায়ারই মতো একটি বুড়ি গুটিগুটি । তার লাঠির ঠকঠক শব্দ জানাত যে সে ছায়া নয়, কায়া । বুড়ি এসে চুপ করে বসে যেত তালাবদ্ধ কপাটের একপাশে। বসে থাকে তো বসেই থাকে বুড়ি। সিড়ি আড় হয়ে পড়ে থাকে তো থাকেই– সাড়া-শব দেয় না দু’জনে কেউ । রোদ ক্রমে সরে, একটু একটু করে আলো এলামাটির দেওয়ালগুলোকে সোনার আভায় একটুক্ষণের জন্যে উজলে দিয়ে, মাদুর গুটিয়ে নিয়ে যেন চলে যায়। সেই সময় একটা ভিখিরী, দুটো লাঠির উপর ভর দিয়ে যেন ঝুলতে-ঝুলতে এসে বসে বন্ধ-দরজার অন্ত পাশে, হাতে তার একটা পিতলের বাটি। সে বসে থাকে, নেকড়-জড়ানো খোড়া পা একটা সিড়িটার দিকে মেলিয়ে গম্ভীর ভাবে। বুড়ে বুড়ি কারো মুখে কথা নেই। কোথা থেকে বড়ে বউঠাকরুনের পোষা বেড়াল গোলাপী –. & 8'.