গানবাজনা করবে। মদ খাব আমরা সে ভয় কোরো না। শুীমন্বন্দরও থেকে গেল। রোজ জলসা হত বাড়িতে। রবিকাকা গান করতেন, আমি তখন তার সঙ্গে বসে তার গানের সঙ্গে স্বর মিলিয়ে এসরাজ বাজাতুম। ওইটাই আমার হত, কারো গানের সঙ্গে যে-কোনো স্বর হোক-না কেন, সহজেই বাজিয়ে যেতে পারতুম। তখন’খামখেয়ালি’ হচ্ছে। একখানা ছোট্ট বই ছিল, লালরঙের মলাট, গানের ছোটো সংস্করণ, বেশ পকেটে করে নেওয়া যায়– দাদা সেটিকে যত্ব করে বাধিয়েছিলেন প্রত্যেক পাতাতে একখানা করে শাদা পাতা জুড়ে, রবিকাকা গান লিখবেন বলে— কোথায় যে গেল সেই খাতাখানা, তাতে অনেক গান তখনকার দিনের লেখা পাওয়া যেত। এ দিকে রবিকাকা গান লিখছেন নতুন নতুন, তাতে তখনই স্বর বসাচ্ছেন, আর আমি এসরাজে স্বর ধরছি। দিল্লুরা তখন সব ছোটে— গানে নতুন স্বর দিলে আমারই ডাক পড়ত। একদিন হয়েছে কী, একটা নতুন গান লিখেছেন, তাতে তখনই স্বর দিয়েছেন— আমি যেমন সঙ্গে সঙ্গে বাজিয়ে যাই, বাজিয়ে গেছি। স্বর টুর মনে রাখতে হবে, ও-সব আমার আসে না, তা ছাড়া তা খেয়ালই হয় নি তখন। পরের দিনে যখন আমায় সেই গানের স্বরটি বাজাতে বললেন, আমি তে একেবারে ভুলে বসে আছি– ভৈরবী, কি, কী রাগিণী, কিছুই মনে আসছে না, মহা বিপক্ষ। আমার ভিতরে তো স্বর নেই, স্থর মনে করে রাখব কী করে। কান তৈরি হয়েছে, হাত পেকেছে, যা শুনি সঙ্গে সঙ্গে বাজনায় ধরতে পারি, এই যা। এ দিকে রবিকাকাও গানে স্থর বসিয়ে দিয়েই পরে ভুলে যান। অন্য কেউ স্বরটি মনে ধরে রাখে। রবিকাকাকে বললুম, কী যেন স্বরটি ছিল একটু একটু মনে আসছে। রবিকাকা বললেন, বেশ করেছ, তুমিও ভুলেছ আমিও ভুলেছি। আবার আমাকে নতুন করে খাটাবে দেখছি। তার পর থেকে বাজনাতে স্বর ধরে রাখতে অভ্যেস করে নিয়েছিলুম, আর ভুলে যেভূম না। কিন্তু ওই একটি স্বর রবিকাকার আমি হারিয়েছি— কেউ আর পেলে না কোনোদিন, তিনিও পেলেন না । গানটা আর আমার হল না। এই সেদিন কিছুকাল আগেই আমি রবিকাকাকে বললুম, দেখো, আমি তো তোমার গান গাইতে পারি না, তোমার স্বর আমার গলায় আসে না, কিন্তু আমার স্বরে যদি তোমার গান গাই, তোমার তাতে আপত্তি আছ ? যেমন অ্যাটিং— উনি কৃষ্ণ দেন, আমি অ্যাকটিং @@
পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/৭৭
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।