থাকবার মধ্যে ছিলেন ক্ষেত্রমোহন কথক ঠাকুর, রোজ কথকতা করতেন আমাদের বাড়ি, কালো মোটাসোটা তিলভাগুেশ্বরের মতো চেহারা । তাকে গিয়ে ধরলুম, রাখীবন্ধন-উৎসবের একটা অনুষ্ঠান বাতলে দিতে হবে । তিনি খুব খুশি ও উৎসাহী হয়ে উঠলেন, বললেন, এ আমি পাঁজিতে তুলে দেব, পাঁজির লোকদের সঙ্গে আমার জানাশোনা আছে, এই রাখীবন্ধন-উৎসব পাঁজিতে থেকে যাবে। ঠিক হল সকালবেলা সবাই গঙ্গায় স্নান করে সবার হাতে রাখী পরাব । এই সামনেই জগন্নাথ ঘাট, সেখানে যাব— রবিকাকা বললেন, সবাই হেঁটে যাব, গাড়িঘোড়া নয়। কী বিপদ, আমার আবার হাঁটাহাঁটি ভালো লাগে না । কিন্তু রবিকাকার পাল্লায় পড়েছি, তিনি তো কিছু শুনবেন না। কী আর করি— হেঁটে যেতেই যখন হবে, চাকরকে বললুম, নে সব কাপড়-জামা, নিয়ে চল সঙ্গে । তারাও নিজের নিজের গামছা নিয়ে চলল স্নানে, মনিব চাকর একসঙ্গে স্বান করবে । রওনা হলুম সবাই গঙ্গাস্নানের উদ্দেশ্বে, রাস্তার দুধারে বাড়ির ছাদ থেকে আরম্ভ করে ফুটপাথ অবধি লোক দাড়িয়ে গেছে – মেয়ের খৈ ছড়াচ্ছে, শাঁক বাজাচ্ছে, মহা ধুমধাম— যেন একটা শোভাযাত্রা । দিনুও ছিল সঙ্গে। গান গাইতে গাইতে রাস্তা দিয়ে মিছিল চলল— বাংলার মাটি, বাংলার জল. বাংলার বায়ু, বাংলার ফল— পুণ্য হউক, পুণ্য হউক, পুণ্য হউক হে ভগবান ॥ এই গানটি সে সময়েই তৈরি হয়েছিল । ঘাটে সকাল থেকে লোকে লোকারণ্য, রবিকাকাকে দেখবার জন্য আমাদের চার দিকে ভিড় জমে গেল । স্নান সারা হল— সঙ্গে নেওয়া হয়েছিল এক গাদা রাখী, সবাই এ ওর হাতে রাখী পরালুম। অন্যরা যার কাছাকাছি ছিল তাদেরও রাধী পরানো হল । হাতের কাছে ছেলেমেয়ে যাকে পাওয়া যাচ্ছে, কেউ বাদ পড়ছে না, সবাইকে রাখী পরানো হচ্ছে। গঙ্গার ঘাটে সে এক ব্যাপার। পাথুরেঘাটা দিয়ে আসছি, দেখি বীরু মল্লিকের আস্তাবলে কতকগুলো সহিস ঘোড়া মলছে, হঠাৎ রবিকাকার ধাঁ। করে বেঁকে গিয়ে ওদের হাতে রাখী পরিয়ে দিলেন। ভাবলুম রবিকাকার করলেন কী, ওরা যে মুসলমান, মুসলমানকে রাখী পরালে— এইবারে একটা মারপিট হবে । মারপিট আর হবে কী। রাখী ዓ »
পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/৮৪
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।