সব চুপ, কারে মুখে কোনো কথা নেই। রবিকাকা দারোয়ানকে বললেন, যাও, পুলিস সাহেবকে নিয়ে এসো উপরে। e ডেপুটিবাবুর অভ্যেস ছিল, সব সময়ে তিনি হাতের আঙ লগুলি নাড়তেন আর এক দুই তিন করে জপতেন। তার কর-জপ বেড়ে গেল পুলিস সাহেবের নাম শুনে। তাড়াতাড়ি উঠে পড়ে বললেন, আমার এখানে তো আর থাকা চলবে না। পালাবার চেষ্টা করতে লাগলেন, বেড়ালের নাম শুনে যেমন ইছর পালাই-পালাই করে। আমি বললুম, কোথায় যাচ্ছেন আপনি, সিড়ি দিয়ে নামলে তো এখুনি সামনাসামনি ধরা পড়ে যাবেন । তিনি বললেন, তবে, তবে-– করি কী উপায় ? আমি বললুম, এক উপায় আছে, এই ড্রেসিং-রুমে ঢুকে পড়ে ভিতর থেকে দরজা বন্ধ করে থাকুন গে। ভদ্রলোক তাড়াতাড়ি উঠে তাই করলেন— ড্রেসিং রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলেন। রবিকাকা মুখ টিপে হাসলেন । দারোয়ান ফিরে এল— জিজ্ঞেস করলুম, পুলিস সাহেব কই । দারোয়ান বললে, পুলিস সাহেব সব পুছকে চলা গয় । পুলিস জানত যুব, আমাদের কোনে উপদ্রব করত না, যে যা মিটিং করতাম— পুলিস এসেই খোঁজখবর নিয়ে চলে যেত, ভিতরে আসত না কখনো । বেশ চলছিল আমাদের কাজ। মনে হচ্ছিল এবারে যেন একটা ইন্ডষ্ট্রিয়াল রিভাইভাল হবে দেশে। দেশের লোক দেশের জন্য ভাবতে শুরু করেছে, সবার নেই একটা তাগিদ এসেছে, দেশকে নতুন একটা-কিছু দিতে হবে। এমন সময়ে সব মাটি হল যখন একদল নেত' শলেন, বিলিতি জিনিস বয়কট করে । দোকানে দোকানে তাদের চেলাদের দিয়ে ধরা দেওয়ালেন, যেন কেউ না গিয়ে বিলিতি জিনিস কিনতে পারে। রবিকাকা বললেন, এ কী, যার ইচ্ছে হয় বিলিতি জিনিস ব্যবহার করবে, যার ইচ্ছে হয় করবে না। আমাদের কাজ ছিল লোকের মনে আস্তে আস্তে বিশ্বাস ঢুকিয়ে দেওয়া – জোরজবরদস্তি করা নয়। মাড়োয়ারি দোকানদার এসে হাতেপায়ে ধরে অনেক টাকা দিয়ে এ বছরের বিলিতি মালগুলো কাটাবার ছাড় চাইলে । নেতারা কিছুতেই মানলেন না। রবিকাকা বলেছিলেন এদের এক বছরের মতো ছেড়ে দিতে— মিছেমিছি দেশের লোকদের লোকসান করিয়ে কী হবে। নেতারা সে স্থপরামর্শে কর্ণপাত করলেন না। বিলিতি বর্জন শুরু হল, বিলিতি কাপড় পোড়ানো হতে লাগল, পুলিসও ক্রমে নিজমূতি ጫ\9
পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/৮৬
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।