বাড়ি গালের দু পাশ দিয়ে তোলা । মসলিনের জামার ভিতর দিয়ে গায়ের গোলাপী আভা ফুটে বেরুচ্ছে। মস্ত একটি আলবোল, টানলেই তার বুলবুল বুলবুল শব্দ আমরা এ-বাড়ি থেকেও শুনতে পেতুম। ওই একবার আমি দেখেছিলুম ওঁকে কোঁচে-বস অবস্থায় । একটা ছবি ছিল তার, বোধ হর এখনো আছে রথীর কাছে— । কালে দাড়ি ওই ছবিতে ছিল, গায়ে বেশ দামি শাল, তখনকার কথা অন্য রকম। এই দাড়ির আবার মজার গল্প আছে, এই গল্প ঈশ্বরবাবুর কাছে শুনেছি আমরা । ঈশ্বরবাবু বলতেন, জানো ভাই, কর্তামশায়ের দাড়ির ইতিহাস ? জানে কোথেকে এই দাড়ির উৎপত্তি ? এই, এই আমি, আমার দেখাদেখি কর্তামশায় দাড়ি রাখলেন । সে কী রকম ! তোমার দাদামশায়, নববাবুবিলাস যাত্রা করবেন, বাড়ির আত্মীয়-স্বজন সবাইকে নামতে হবে সেই যাত্রাতে— । সবাই কিছু-না-কিছু সাজবে । আমাকে বললেন, ঈশ্বর, তোমাকে দারায়ান সাজতে হবে। পরচুলো-টুলো নয়, আসল গোঞ্চ-দাড়ি গজাও । তখন দাড়ি রাখার কোনো ফ্যাশান ছিল না, সবাই গোফ রাখতেম কিন্তু দাড়ি কামিয়ে ফেলতেন । আর সত্যিও তাই— । পুরোনে আধলের সব ছবি দেখো কারো দাড়ি নেই, সবার দাড়ি কামানে । কর্তাদাদামশায়েরও দাড়িকামানে ছবি আছে । আমি বর্ধমানে রাজার বাড়তে দেখেছি । বর্ধমানের রাজা তাকে গুরু বলতেন। তারও একটা গল্প আছে— । এও আমাদের ঈশ্বরবাবুর কাছে শোনা । একবার বর্ধমানের রাজ এসেছেন এখানে গুরুকে প্রণাম করতে । তখনকার দিনে বর্ধমানের রাজা আসা মানে প্রায় লাটসাহেব আসার মতে, সোরগোল পড়ে যেত । রাজাকে দেখবার জন্য রাস্তার দু ধারে লোক জমে গেছে, আশেপাশের মেয়ের ছাদে উঠেছে। এখন রাজাকে নিয়ে তিন তাই, কর্তাদাদামশায়, আমার দাদামশায় আর ছোটোদাদামশায় তেতলায় ছাদে এ ধারে ও ধারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন । ঈশ্বরবাবু বলতেন– ত, আমরা তো নীচে ঘোরাঘুরি করছি— শুনি সবাই বলাবলি করছে— এদের মধ্যে রাজ কোনটি। এই বলে তারা তোমার ওই তিন দাদামশায়কে ঘুরে ফিরে দেখিয়ে দিচ্ছে— কেউ বলছে এটা রাজা, কেউ বলছে ওইটাই রাজা । b ●
পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/৯৮
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।