পাতা:অভাগীর স্বর্গ - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দিন-কয়েক পরে কি একটা কথার প্রসঙ্গে হরিলক্ষ্মী হাসিমুখে স্বামীকে জিজ্ঞাসা করিল, ওঁদের সম্বন্ধে কিছু করছ নাকি ? কাদের সম্বন্ধে ? বিপিন ঠাকুরপোদের সম্বন্ধে ? শিবচরণ নিম্পৃহভাবে কহিল, কি-ই বা করব, আর কি-ই বা করতে পারি ? আমি সামান্য ব্যক্তি বৈ আিত না ! হরিলক্ষ্মী উদ্বিগ্ন হইয়া কহিল, এ কথার মানে ? শিবচরণ বলিল, মেজবৌমা বলে থাকেন। কিনা, রাজত্বটা ত আর বঠ ঠাকুরের নয়-ইংরাজ গভন মেণ্টের । হরিলক্ষ্মী কহিল, বলেছে নকি ? কিন্তু আচ্ছা কি আচ্ছা ? স্ত্রী একটুখানি সন্দেহ প্রকাশ করিয়া বলিল, কিন্তু মেজবীে ত ও রামক কথা বড় একটা বলে না । ভয়ানক চালাক কিনা ! অনেকে আবার বাড়িয়েও হয় ত তোমার কাছে বলে যায় । শিবচরণ কহিল, আশ্চর্য নয় । তবে কিনা, কথাটা আমি নিজের কানেই শুনেছি । হরিলক্ষ্মী বিশ্বাস করতে পারিল না, কিন্তু তখনকার মত স্বামীর মনোরঞ্জনের নিমিত্ত সহসা কোপ প্রকাশ করিয়া বলিয়া উঠিল, বল কি গো, এতবড় অহঙ্কার! আমাকে না হয় যা খুশি বলেছে, কিন্তু ভাশুর বলে তোমার তা একটা সম্মান থাকা দরকার । শিবচরণ বলিল, হিন্দুর ঘরে এই তা পাচজনে মনে করে। লেখাপড়াজানা বিদ্বান মেয়েমানুব কিনা । তবে আমাকে অপমান করে পার আছে, কিন্তু তোমাকে অপমান করে কারও রক্ষে নেই। সদরে একটু জরুরী কাজ আছে, আমি চললাম। --এই বলিয়া শিবচরণ বাহির হইয়া গেল। কথাটা যে-রকম করিয়া হরিলক্ষ্মীর পাড়িবার ইচ্ছা ছিল তাহা হইল না, বরঞ্চ উল্টা হইয়া গেলে ইহাই তাহার পুনঃ পুনঃ মনে হইতে লাগিল ।