পাতা:অভাগীর স্বর্গ - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৫৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

একদম প্রবেশ করে নাই তাঁহা নহে, কিন্তু ইচ্ছাপূর্বক আজ লিও জানালাগুলা একেবারে বন্ধ করিয়া দিয়াছিল। শব্দ-সাড়াগুলা সেখানে তেমন গোলযোগ করিতে পারিতেছিল না । এদিকে গাহিতে গাহিতে মেরির কণ্ঠ শুষ্ক হইয়া আসিতেছে, পার্শ্বেও চালাস কিংবা আর কেহ শেরির গ্রাস লইয়া দাড়াইয়া আছে। ক্রমাগত শেরি গ্লাসের মুখচুম্বন করিয়া মেরির গলাটা নিতান্ত সরস এবং মস্তিষ্ক অত্যন্ত সজীব হইয়া উঠিল । উৎসাহের সহিত গভীর রাত্রি পর্যন্ত পিয়ানোর ঝঙ্কার উঠিতে লাগিল । শেষ হইলে, শয্যায় শয়ন করিয়া সেদিনের মত আজ আর নিদ্রা আসিল না ; মেরি অনেক কথা ভাবিল। পুরুষের দল তাহার বড় প্রশংসা করিয়াছে-কেমন করিয়া তাহার শুভ্র পুষ্পকোরকতুল্য অঙ্গুলি কি-বোর্ডের উপর বিদ্যুৎ গতিতে ছুটয়া যাইতেছিল এবং অঙ্গুলি সংলগ্ন বৃহৎ হীরক-অঙ্গুরীয় মধ্যে মধ্যে ঝকঝকি করিয়া এক শোভা দশগুণ করিয়াছিল ; কিন্তু সহসা মনে পড়িল হয়ত আর একজনের আরও শুভ্র, আরও সুন্দর, কিন্তু ক্লান্ত এবং অবসন্ন অঙ্গুলি দুইটি এখনও নিঃশব্দে কাগজের উপর দিয়া ধীরে ধীরে লিখিয়া চলিয়াছে । সে হয়ত সমস্ত শুনিয়াছে, হয়ত বা ক্লেশ অনুভব করিয়াছে, কিন্তু প্রতিবিধানের উপায়। কৈ ? মধু থাকিলে মৌমাছি আসিবেই, ধন থাকিলে তাহার চতুস্পার্থে লোকসমূহ জড় হইবেই, নতুন সম্বন্ধের বন্ধন যৌবনের অঙ্গ জড়াইয়া উঠিবার স্বতঃ প্রয়াস করিবেই।--ইচ্ছা থাকিলেও এ বঁাধন নিজ হস্তে খুলিয়া ফেলা যায় না। মেরি কাতরভাবে উদ্ধারের কামনা এবং প্রার্থনা।” করিতে করিতে সে রাত্রে ঘুমাইয়া পড়িল । পরদিন সে লিওর কাছে গিয়া বসিল, লিও লিখিতেছে, কৈ একবারও চাহিয়া দেখিল না। অনেকক্ষণ ধরিয়া মেরি কথা খুজিয়া পাইল -- না। --তারপর সাহসে ভরা করিয়া বলিল, “তোমার আর কত বাকী আছে?” 'टकक ।” “আজি দু-তিনদিন ধরিয়া কি লিখিলে ? আমাকে শুনাইবে না ? এই সময়ে অসাবধানতাবশতঃ মুখে অনেকখানি কালি উঠিয়াছিল ; GS