পাতা:অভাগীর স্বর্গ - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৫৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাজিকরের বাজি দেখিবার জন্য সন্ধ্যার পূর্ব হইতেই অনেকে ধীরে ধীরে জমা হইতেছে। যাহার শরীর অসুস্থ সেও রীতিমত গরম কাপড়ে। আপাদমস্তক মুড়ি দিয়া সন্ধ্যার মধ্যেই উপযুক্ত স্থান দখল করিয়া বসিয়াছে কথা ছিল সাতটার গাড়িতে বাজিকর আসিবে এবং আধঘণ্টার মধ্যেই তাহার বিদ্যু হস্তকৌশল ইত্যাদি পরিদর্শন করাইবে ; তাহার পব দশটার সময় ভোজনাদি হইবে । সাড়ে-সাতটার জন্য সকলেই উৎসুক হইয়া ছিল, কিন্তু সাতটার সময় একটা অসম্ভব ঘটনা ঘটিল। বাজিকরের পরিবর্তে একখানা টেলিগ্রাফ আসিয়া উপস্থিত হইল ! "জাদুকর হঠাৎ বড় পাড়ি হু হইয়াছে।--আসিতে পরিবে না।” সঙ্গে সঙ্গে মেরির মাথাটা ঘূবিয়া গেল ! এখন উপায় ? দক্ষিণ হস্তে চার্লসের হস্তে কাগজখানা দিয়া বলিল, “যাহা হয় করে ! কেহ আমার কথা জিজ্ঞাসা করিলে বলিও, সহসা পীড়িত হইয়া শয্যা আশ্রয় করিয়াছি।” টেলিগ্রাফ পড়িয়া চাল, সও বিষম অভিভূত হইল ; সেও কহিল, "উপায় ? সাতটা হইতে দশটা পর্যন্ত কাটে কিরূপে ? আপাততঃ এ কথা চাপা রহিল। ক্রমশঃ লোকে হল পূর্ণ হইয়া গেল। আগ্রহ এবং উৎকণ্ঠী সকলের মুখে : ক্রমে যত সময় যাইতে লাগিল, তত সকলে ব্যস্ত হইতে লাগিল। যাহারা কিছু অসুস্থ ছিল, তাহারা গৃহে প্রত্যাগমনের উপায় খুজিতে লাগিল ; সর্বত্রই একটা অস্ফুট চাপা কলবর হইতে লাগিল, ভাবগতিক দেখিয়া মেরির নিজের কেশ উৎপাটন করিবার ইচ্ছা হইল । ক্রমশঃ কথাটা জানাজানি হইল --তখন হতাশ হইয়া কেহ বা সংগীতের কথা উত্থাপন করিল, কোন বৃদ্ধ বা তাহার সঙ্গিনীকে হুইস্ট টেবিলের দিকে টানিয়া লইয়া গেল, কোন যুবক তাহার বন্ধুর হাত ধরিয়া ধীরে ধীরে বিলিয়ার্ড হলের দিকে চলিল,-এইরূপে সাতটা হইতে দশটা পর্যন্ত কেমন করিয়া কাটান যাইতে পারে তাহা সবাই ভাবিতে বসিল । সকলকে অন্য কোন উপায়ে নিযুক্ত রাখিবার কোনরূপ আয়োজন করিয়া রাখা হয় নাই ( e.