পাতা:অভিযাত্রিক - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৫৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অভিযাত্রিক 5 C গুর্ষে যে শুভ্রকান্ত বুক্ষকে শিববৃক্ষ বলে উল্লেখ করেচি, এ বনে তার সংখ্যা খুব বেশি । এত শিব-বৃক্ষের ভিড় আমি আর কোথাও দেখিনি । এই বনে আর একটি পুষ্পবৃক্ষ দেখলুম-পরে অবিশ্যি সিং ভুমি অঞ্চলের পার্বত্য অরণ্যে এই জাতীম গাছ আরও দেখেচি । গাছটার ফুল অবিকল কাঞ্চন ফুলের মতো, গাছটাও দেখতে সেই ধরনের । বনের মধ্যে যেখানেসেখানে এই বৃক্ষ অজস্র পুষ্প-সম্ভারে সজ্জিত হয়ে দাড়িয়ে । বনের মধ্যে মাইল দুই-তিন হাটবার পরে পথ ক্রমে উচু দিকে উঠতে লাগলো-এক জায়গায় গিয়ে পথটা হঠাৎ শেষ হয়ে গেল । আমরা যেন একটা পাহাড়ের ওপর থেকে অনেক নিচু উপত্যকার দিকে চেয়ে দেখাচি । আমাদের ওই উপত্যকার মধ্যে নামতে হবে সরু পথ বেয়ে, কোনো কোনো জায়গায় পাহাড়ের ফাটল থেকে বেরুনো শেকড় ধরে । বিস্বাধর আমাদের সঙ্গে ছিল। সে বললে-পুলিশে জঙ্গল কেটে রাস্তা পরিষ্কার করে দিয়েচে । * নামতে ত'ত অসুবিধে হবে না। বাবু। সবাই মিলে পাহাডের গা ধরে সন্তৰ্পণে অনেকটা নিচে নাম লুম, আঁক-বাক পথ বেয়ে । তারপর ওপর দিকে চেয়ে দেখা গেল অনাবৃত পর্বতগাত্রে লম্বালম্বিভাবে খোদাই করা কতকগুলি অজ্ঞাত অক্ষর বা ছবি । পরিমল বিভিন্ন দিক থেকে শিলালিপির ফটো নিলে, অক্ষরগুলির অবিকল প্রতিলিপিও একে নিলে। জায়গাটার প্রাকৃতিক দৃশ্য সত্যিই অপূর্ব । আমাদের আরও নিচে উপত্যকার মেজে । যে পাথরের গায়ে শিলালিপি উৎকীর্ণ, তাকে পাহাড না বলে একটা মালভূমির অনাবৃত শিলাগাত্র বলাই সঙ্গত । নিম্নের উপত্যক নানাজাতীয় বন্যবৃক্ষে সমাচ্ছন্ন, তার মধ্যে কাঞ্চন ফুলগাছের মতো সেই গাছও যথেষ্ট-ফুলে ভর্তি তয়ে সেই নির্জন পর্বতারণ্যের শোভা ও গাম্ভীর্য বৃদ্ধি করাচে ।