পাতা:অমৃত-দ্বীপ - হেমেন্দ্রকুমার রায় (১৯৪০).pdf/১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
8
অমৃত-দ্বীপ

 তাদের পুরাতন দলের মধ্যে কেবল বিনয়বাবু আর কমলকে এবারে সঙ্গীরূপে পাওয়া গেল না। বিনয়বাবু এখন ম্যালেরিয়ার তাড়নায় কুইনিন ও আদার কুচির সদ্ব্যবহারে ব্যস্ত এবং কমল দেবে এবার মেডিকেল কলেজের শেষ পরীক্ষা।

 জাহাজখানির নাম “লিট্ল ম্যাজেষ্টিক”। আকারে ছোট হ’লেও যাত্রীদের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের জন্যে এর মধ্যে চমংকার সাজানো-গুছানো ‘লাউঞ্জ’, ‘ডাইনিং সেলুন’, ‘প্রমেনেড ডেক’ ও ‘পাম-কোট’ প্রভৃতিরও অভাব ছিল না। এ-রকম জাহাজ ‘চার্টার’ করা বহুব্যয়সাধ্য বটে, কিন্তু বিমল ও কুমার যে অত্যন্ত ধনবান এ-কথা সকলেই জানেন। তার উপরে জয়ন্তও বিনা পয়সার অতিথি হ’তে রাজি হয় নি এবং সেও রীতিমত ধনী ব্যক্তি।

 জাহাজ তখন টুংহাই বা পূর্ব্বসাগর প্রায় পার হয়ে রিউ-কিউ দ্বীপপুঞ্জের কাছ দিয়ে প্রশান্ত মহাসাগরের দিকে অগ্রসর হ’চ্ছে।

 উপরে, নীচে চারিদিকে ছড়িয়ে আছে কেবল অনন্ত নীলিমা-কাছে চঞ্চল, দূরে প্রশান্ত।

 এই নীলিমার জগতে এখন নূতন বর্ণ সৃষ্টি করছে নিম্নে শুধু শুভ্র ফেনার মালা এবং শূন্যে শুভ্র সাগর-বিহঙ্গের দল। প্রকৃতির রঙের ভালায় এখন আর কোন রং নেই।

 প্রাকৃতিক সঙ্গীতেও এখানে নব নব রাগিণীর ঝঙ্কার নেই। না আছে উচ্ছ্বসিত শ্যামলতার মর্ম্মর, না আছে গীতকারী পাখীদের সুরের খেলা, বইছে কেবল হু-হু শব্দে দুরন্ত বাতাস এবং জাগছে কেবল আদিম সাগরের উচ্ছল কল্-কল্ মন্ত্র——এ-দুই ধ্বনিরই সৃষ্টি পৃথিবীর