পাতা:অমৃত-দ্বীপ - হেমেন্দ্রকুমার রায় (১৯৪০).pdf/১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
অমৃত দ্বীপ

চেয়েও অভদ্র। ঐ নেড়ে-কুত্তোটাকে আমি কিছুতেই সহ্য করতে পারব না, চলুম আমি এখান থেকে।”

 সুন্দরবাবু লম্বা লম্বা পা ফেলে অদৃশ্য হ’লেন, বাঘা বিলক্ষণ অপ্রতিভভাবে ফ্যাল্-ফ্যাল্ ক’রে তাকিয়ে রইল। এ লোকটি যে তাকে দু-চোখে দেখতে পারে না, এটা সে খুবই বোঝে। তাই বাঘার কৌতূহল হয়, সুন্দরবাবুকে কাছে পেলেই সে তাঁর পা শুঁকে দেখে। মানুষের চরিত্র পরীক্ষা করবার এর চেয়ে ভদ্র উপায় পৃথিবীর কোন কুকুরই জানে না।

* * * *

 পরদিন প্রভাতে ‘ব্রেক্ফাষ্টে’র পর বিমল ও কুমার জাহাজের ডেকে উঠে গেল। জয়ন্ত লেব্‌লাকের লেখা একখানা ডিটেক্‌টিভ উপন্যাস নিয়ে ‘লাউঞ্জে’ গিয়ে আরাম করে বসল, মাণিকও তার দৃষ্টান্ত অনুসরণ করলে।

 সুন্দরবাবু বিরক্তি-ভরে বললেন, “জাহাজে উঠে পর্য্যন্ত দেখছি, বিমলবাবু আর কুমারবাবু অদৃশ্য শত্রুর কাল্পনিক ছায়া দেখবার জন্যে ব্যতিব্যস্ত, আর তোমরা গাঁজাখুরি ডিটেক্‌টিভের গল্প নিয়েই বিভোর। কারুর সঙ্গে দুটো প্রাণের কথা বলবার ফাঁক নেই!”

 জয়ন্ত জবাব দিলে না। মাণিক বললে, “আচ্ছা, এই রইল আমার বই! এখন প্রকাশ করুন আপনার প্রাণের কথা।”

 সুন্দরবাবু নিম্নস্বরে বললেন, “কথাটা কি জানো? এই অমৃতদ্বীপ, অমর-লতা, জলে-স্থলে-শূন্যে চিরজীবী মানুষের অবাধ গতি, এ-সব কি তুমি বিশ্বাস কর ভায়া?”